আজ ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
মো. সোহেল, আনোয়ারা প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় মামলাবাজ চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই মামলাবাজ চক্রটি সুযোগ বুঝে অসহায় লোকজনকে এলাকা ছাড়া করে তাদের বসতভিটেও কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি প্রদীপ দত্ত নামের এক মামলাবাজ চক্রের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা এলাকার দুবাই প্রবাসী সুপন সিকদার সুমনের পরিবার। শুধু তাই নয়, মিথ্যা বানোয়াট মামলায় গ্রেপ্তারী পরোয়ানাও জারি হয়েছে এ প্রবাসির বিরুদ্ধে। এই নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যও সৃস্টি হয়েছে।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে সরেজমিনে উপজেলার শোলকাটা গ্রামের প্রদীপ দত্তের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়ির উঠানে একটি টিনের বেড়া দিয়ে লোকনাথ আশ্রম মন্দির তৈরী করা হয়েছে। যার প্রতিষ্ঠাকাল ২০০২ সালে। আর মন্দিরে ভিতরে রয়েছে দুইটি মুর্তিও দেখা যায়। ঐ মন্দিরের মুর্তি ভাঙ্গার ঘটনায় অভিযোগ এনে আধা কিলোমিটার দূরে পাশের বাড়ির পরিমল সিকদারের পরিবারের ৭ সদস্যকে আসামী করে ২ জানুয়ারী চট্টগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন প্রদীপ দত্ত।
ঘটনাস্থলে গিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে প্রদীপ দত্ত ও পরিমল সিকদারের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। এ বিরোধের জেরে প্রদীপের নিজের বাড়ির উঠানের লোকনাথ মন্দিরের দুইটি সরস্বর্তী মুর্তি রাতের আধারে কে বা কারা ভাঙচুর করে কেউ জানে না। এ মন্দিরের মুর্তি ভাঙচুরের ঘটনায় দুইদিন পর পাশের বাড়ির পরিমল সিকদারের পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রদীপ। কিন্তু ঘটনাটি ঘটেছে ৩১ ডিসেম্বর সেদিন ছিলেন আগ্রাবাদ স্টুডিওতে একটা গানের রেকর্ড এর কাজে, পরিমল সিকদারের ছেলে দুবাই প্রবাসী সুপন সিকদার, সুমন বিরুদ্ধে হয়েছে গ্রেপ্তারী পরোয়ানাও বাকী সদস্যেদর কে সমন জারি করেছে মহামান্য আদালত।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিমল সিকদারের ভাতিজা সুজন সিকদার বলেন, এঘটনায় দুবাই প্রবাসী সুপন সিকদার সুমন ও তাদের পরিবারের সবাই কে আসামী করা হলেও তারা ঘটনার সময়ে বাড়িতে ছিলেন না। মুুর্তি ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর আমরা সবাই ভূমিমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে গিয়েছিলাম। প্রদীপ বলেছে সে আমাদের কাছে জমি পাবে সেজন্য মামলা করছে। ভূমিমন্ত্রী মহোদয় আনোয়ারা ভাইস চেয়ারম্যান মৃণাল কান্তি ধর, আনোয়ারা উপজেলা পূর্জা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুগ্রীব মজুমদার দোলন ও এডভোকেট হরিপত্ত চক্রবর্তীকে দায়িত্ব দিয়েছেন বিষয়টি দেখার জন্য। তারপর উনারা একটি বৈঠকও করেন আমাদের নিয়ে। এটি একটি মিথ্যা বানোয়াট মামলা দিয়ে সে তাদের হয়রানী করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ঝুন্টু সিকদার বলেন, প্রদীপ একজন এলাকায় সুদি ও ভূমিদস্যূ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। সে একজন মামলাবাজ ব্যক্তি। সে এলাকার একটি হত্যা মামলার ১নং আসামী ছিলো টাকার বিনিময়ে সে মামলা আপোষ করে পার পেয়ে যায়। তার অত্যচারে আনোয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিকক অজিত মিত্রের ছেলে সুপনকর মিত্রকে মামলা দিয়ে অতিষ্ঠ করে ফেলার কারণে তারা পরিবার নিয়ে ভারতে চলে যায়। এলাকার সাধারণ মানুষদের সে মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ভূমি দখলও নিয়েছে। আমরা তার অতিষ্ঠ জুলুম থেকে মুক্তি চাই।
ভূক্তভোগী পরিমল সিকদার বলেন, ২০১৬ সালে ২ কানি ৭ গন্ডা জমি ছিল প্রকৃতি রঞ্জন দত্ত প্রকাশ সোনা বাবু র তৎমধ্যে মিউটেশন হয়েছে ১ কানি সারে ১৮ গন্ডা তৎমধ্যে একখানি সাড়ে ১৪ গন্ডা জায়গা জমি আমি ক্রয় করি , ক্রয় করার পরে আমি যখন আমার জায়গায় বাউন্ডারি দিচ্ছি তখন সে আমাকে বাউন্ডারি দেওয়ার কাজে অনেক বাধা প্রদান করেন পরে সে মাননীয় চিফ জুডিশিয়াল আদালতে একটি ১৪৫ ধারায় মামলা করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করে মন্দির ভেঙে ওয়াল নির্মাণ করতেছি তখন মহামান্য আদালত আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জকে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য আদেশ দেন, তখন এসআই নুরুল করিম এসে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাজ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারপর রিপোর্ট দেন। তখনই মহামান্য আদালত মামলা খারিজ করে দেন পরবর্তীতে ২০২০ সালে প্রদীপ উঠানের মন্দিরের মুর্তি ভাঙচুরের ঘটনায় আমাদের পরিবারের সদস্যদের জড়িয়ে দেওয়া হয় মামলায়। আমার বাড়ি থেকে প্রদীপের বাড়ি আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আমি নাকি আমার পরিবার নিয়ে মন্দিরের মুর্তি ভেঙ্গেছি বলে মামলা দিয়েছে। আমি একজন হিন্দু সম্প্রাদায়ের সাধু। আমি নিজেই মন্দিরের পূর্জা করি। বিভিন্ন এলাকায় মন্দি নির্মাণের জন্য আর্থিক সহযোগিতাও করি। আমি কি করে মন্দিরের ভাঙচুর করব বলতে পারেন। মামলাবাজ ভূমিদস্যূ প্রদীপের ভয়ে এলাকায় কেউ কথা বলে না। প্রদীপের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসন ও ভূমিমন্ত্রী মহোদয়ের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রদীপ দত্ত মুঠোফোনে বলেন, আমি এখন গাড়িতে আছি। আপনার সাথে এখন কথা বলতে পারব না। পরে বসে কথা বলব।
আনোয়ারা উপজেলা পূর্জা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুগ্রীব মজুমদার দোলন জানান, মন্দিরের মুর্তি ভাঙচুরের ঘটনা হওয়ার পর দু’পক্ষ ভূমিমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে গিয়েছিলো। এবিষয়ে দেখার জন্য ভাইস চেয়ারম্যান মৃণাল কান্তি ধর ও এডভোকেট হরিপত্ত চক্রবর্তীসহ আমাকে দায়িত্ব দেন মন্ত্রী মহোদয়। আমরা ঘটনাস্থল পরির্দশন করে বুঝতে পারলাম মন্দিরের মুর্তি ভাঙচুরের ঘটনাটি সাজানো। তাদের দু’পক্ষের জমি নিয়ে বিরোধ আছে। সে বিরোধের জেরে এ গুলো করছে।
তিনি আরো বলেন, ঘটনাটি পরির্দশন শেষে আনোয়ারা থানার ওসি সাহেবকে জানানোর পর তিনি থানায় প্রদীপের মামলাও নেননি। কিন্তু সে আদালতে গিয়ে এ মামলাটি করে। দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বিষয় নিয়ে দু’পক্ষের সাথে মন্ত্রী মহোদয় দেশে আসলে আমরা বসে সমাধান করে দিবো। সমাধান হলে প্রদীপের করা মামলা তুলে নিতে নির্দেশ দিবো। আমরা অতীতেও উপজেলার বন্দর কমিউনিটি সেন্টারের একটি জমি নিয়ে ঘটনা ঘটেছিলো। সেটিও মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশের দ্রুত সমাধান করে দিয়েছি। আশা করি শীঘ্রই এটাও সমাধান হয়ে যাবে।