আজ ২২শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
যেখানে বছরে দু’টো পরীক্ষা নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে, শিক্ষকেরা তা অমান্য করে বছরে তিনটি পরীক্ষা নিচ্ছে। অনেক কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে ৬টি পরীক্ষা নিচ্ছে। এতে অভিভাবকদেরকে পরীক্ষা ফি নামে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর সরকার বিনামূল্যে সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় উৎসাহিত করার জন্য বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ ও উপবৃত্তির টাকা দিচ্ছে। সরকারী নির্দেশনা না মেনে অনেকগুলো বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চলছে দ্বৈত নীতি। দ্বৈত নীতির কারণে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কয়েকদিন পর পর পরীক্ষার ফিস ও মাসিক বেতন পরিশোধ করতে অভিভাবকদের নাভিশ্বাস উঠছে। এসএসসি ফরম পূরণের সময়ও পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা অভিভাবকদের গুণতে হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর স্বারক আদেশ মোতাবেক একটি শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক/ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় একটি অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা ২২ জুন থেকে শুরু করে ১২ দিনের মধ্যে এবং একটি বার্ষিক পরীক্ষা ২২ নভেম্বর শুরু করে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্ব স্ব বিদ্যালয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিজেরা প্রণয়ন করবে। কোন অবস্থায় বাইরে তৈরি করা প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া যাবে না। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের এ নিয়ম অমান্য করে সমিতির প্রশ্নে অর্ধ-বার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াও একাধিক পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। কিন্ডারগার্টেনগুলোতে একই অবস্থা। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্ধ-বার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোন পরীক্ষা নেয়া হয় না।
ফেনী সদর উপজেলার ৬২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে সমিতির প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। যা সরকারী নীতির পরিপন্থী। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলহাজ্ব কোব্বাদ আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়, রামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাজীরবাগ দোস্ত মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়, ধর্মপুর আমিন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, মঠবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয়, সামসুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, তোফাজ্জল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়, ফকিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, বালিগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়, হকদি উচ্চ বিদ্যালয়, ধোনসাহাদ্দা উচ্চ বিদ্যালয়, বিরলী উচ্চ বিদ্যালয়, গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ইজ্জতপুর উচ্চ বিদ্যালয়, সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, লেমুয়া উচ্চ বিদ্যালয়, শেখ মুজিবুল হক উচ্চ বিদ্যালয় ও ছনুয়া উচ্চ বিদ্যালয়।
ছাগলনাইয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আল-মমিন জানান, ছাগলনাইয়া উপজেলায় সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও করইয়া বহুপার্শিক উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়া সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাময়িক পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণী ২৫০ টাকা, সপ্তম ও অষ্টম ৩০০ টাকা, নবম ও দশম ৩৫০ টাকা পরীক্ষা ফি গ্রহণ করছেন। উক্ত বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি জেলা শিক্ষা অফিসারে নিকট লিখিত অভিযোগ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষকেরা সামান্য কিছু টাকা পায়। এ টাকাগুলো এক সাথে আদায়ের জন্য পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষার সময় অভিভাবকেরা ফিসের সাথে বেতনও পরিশোধ করেন।
সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও রামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জহির জানান, ২০১০ সালের শিক্ষানীতির আলোকে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জুলফিকার আলী পরীক্ষা নেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ২২ এপ্রিল পরীক্ষা শেষ হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার কাজী সলিম উল্যাহ জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর স্বারক আদেশ মোতাবেক একটি শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক/ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় একটি অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা ও একটি বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, স্ব স্ব বিদ্যালয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিজেরা প্রণয়ন করবে। কোন অবস্থায় বাইরে থেকে প্রশ্ন তৈরি করা যাবে না। এ নির্দেশ থাকলেও শিক্ষক সমিতি সাময়িক/ মডেল টেস্ট ৩ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল ২০ দিন ব্যাপী সমিতি থেকে প্রশ্ন ক্রয় করে পরীক্ষা গ্রহণ করছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি ২৫০ টাকা, সপ্তম ও অষ্টম ৩০০ টাকা, নবম ও দশম ৩৫০ টাকা পরীক্ষা ফি গ্রহণ করছেন। যা সরকারের নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক ও মন্ত্রণালয়ে অবহিত করা হয়েছে।