আজ ২৬শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ || ১৩ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান খান, মহেশখালী:
“মহেশখালীতে মীর কাসেম, রমজান আলী, মোস্তাক, তোফায়েল সানা উল্লাহ সহ একদল ভূমি দস্যু সবাড় করছে মাটি” শিরোনামে নিউজের পরিপ্রেক্ষিত ফলোআপ নিউজ ৷
প্রতিদিন কালারমার ছড়ার আধারঘোনা মিজ্জির পাড়ার সিমান্তের একদল ছারা থেকে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে হুমকিতে পড়েছে কৃষি জমি, ঘরবাড়ি, পাহাড়ি ধসে পড়ার আশংকা রয়েছে। সরকারি এই খাস জমিতে দিন রাত বালি উত্তোলনের ফলে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
ছরা থেকে বালি উত্তোলনে সরাসরি জড়িত রয়েছেন যারা, কালারমার ছড়া এলাকার মীর কাসেম, রমজান আলী, মোস্তাক, তোফায়েল, সানা উল্লাহ সহ একদল ভূমি দস্যু। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসীরা।
উল্লেখিত শিরোনামের নিউজের ভিত্তিতে আমি উক্ত এলাকায় সরেজমিনে উপস্থিত হলে খতিয়ান, সিট পর্যালোচনা করে দেখলাম এসব জায়গা চাষাবাদ উপযুক্ত জমি৷ বর্ষার সময় ছারার ঢলের পানি প্রবহিত হয়ে চাষাবাদের উপযোক্ত জমিতে বালি উঠে জমি নষ্ট হয় ৷
তোফায়েল আমাদের বলেন, জমিটি খাস নই, বিএস মালিকদের থেকে আমরা আগামী একবছরের জন্য লাগিয়ত/ভাড়া নিয়েছি ৷ বর্ষাকালে ছারার পার ভেঙ্গে জমিতে বালি উঠছে ৷ চাষাবাদের স্বার্থে সে বালিগুলো আমরা অপসারণ করছি ৷ বালি মাটিগুলো রাস্তা, কবরস্থান ভরাট করে কিছু বিক্রি করে আমাদের খরচ তুলতেছি ৷ জমিটি বিএস খতিয়ান মালিক ভোক্ত, আমরা তাদের থেকে অগ্রিম লাগিয়ত/ভাড়া নিয়ে বালি উত্তোলন করছি৷ এসব ব্যপারে আমাদের বিশ্বস্ত মাধ্যমে নতুন এসিল্যান্ড মহোদয়কে অবগত করছি ৷
রমাজান আলী বলেন, আমাদের নামে যারা অপপ্রচার চলাচ্ছে তাদের আল্লাহ হেদায়ত দান করোক ৷ আমি আর কিছু বলবনা ৷
মোস্তাক বলেন, জমির মালিকগণ স্বপ্রনোদিত হয়ে এ জমি থেকে মাটি অপসারণের দায়িত্ব দেওয়ায় আমরা স্ব উদ্যোগে এ কাজ করছি ৷
মীর কাশেম বলেন, আমার আয়ের বিভিন্ন মাধ্যম আছে, বালি বিক্রি করে আমার পেট চলাতে হবে না ৷ আমরা ১৮ জন মিলে গাড়ি ভাড়া করে মাটিগুলো অপসারন করে চাষাবাদের উপযোক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি জমির মালিকদের স্বার্থে, জমির মালিকদের থেকে জিজ্ঞেসা করতে পারেন ৷ এসব অপপ্রচার না করে সরেজমিনে আসেন; দেখে যান ৷ আমরা জায়গার মালিকদের জায়গার ভাড়া দিয়ে বালি উত্তোলন করছি ৷ কার কার জায়গা তাদের নাম আপনাদের দিব ৷
পঙ্গু সানাউল্লাহ বলেন, আমি একজন পঙ্গু ব্যক্তি, আমার একটা পা হারিয়েছি শুধু জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য ৷ আমার কোন অর্থ নেই ৷ আমার দুটি পুরাতন সিএনজি গাড়ি আছে এ হচ্ছে আমার আয়ের পথ ৷ আমি আগে খারাপ ছিলাম; কিন্তু আমি এখন ভাল হওয়ার চেষ্টা করছি ৷ আমি এক পায়ের মানুষ, আমাকে যেবা যারা ভূমিদস্যু বানাল এর বিচার আল্লাহকে দিছি ৷
জায়গার মালিক আকতার হোছাইন বলেন, এর আগে আমাদের জমি থেকে যারা বালি উত্তোলন করছে তারা আমাদের কোন জমির ভাড়া দেয়নি ৷ গায়ের জোরে প্রায় পাঁচ হাজার ট্রাক গাড়ি করে বালি উত্তোলন করছে ৷ আমাদের এক টাকাও দেয়নি ৷ এখন যারা বালি উত্তোলন করছে আমার ৬২ কড়া জমিতে ২৩ হাজার টাকা ভাড়া দিয়েছে৷ এখন আসল ভূমিদস্যুদের গা ঝলতেছে ৷
স্থানীয় ব্যক্তি কালারমারছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাস্টার রুহুল আমিন ফোনে যোগাযোগ করলে বলেন, আমি এ বিষয়ে শুনছিলাম ও আমি যা জানি বিগত বর্ষা মৌসুমের আগে ফেসবুকে পোস্টকারীরা মিলে এ সরকারী ছারা থেকে প্রচুর বালি উত্তোলন করার কারণে বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে অনেক ফসলী জমি নষ্ট করে ফেলেছিল, বর্তমানে যাদের ভূমিদস্যু বলে আখ্যায়ীত করতেছে তারাই বরং নিজ উদ্যোগে ছরার বাঁধ পুনরায় মেরামত করে এবং পরবর্তী সময়ে এমপি জনাব আশেক উল্লাহ রফিকের এক লক্ষ টাকার বরাদ্ধের সাথে ভূমি মালিকরা আরো এক লক্ষ টাকা মোট দুলক্ষ টাকা খরচ করে বাঁধ বাধে ৷ এরা ভূমিদস্যু নয় বরং তারা ভূমি হেফাজতকারী বলে আমি মনে করি৷
জমির মালিক আকতার হোছাইন বলেন, আমার নিজ দখলীয় জমিতে বর্ষাকালে ছারার পানিতে করে বালি এসে আমার জমি নষ্ট হয়ে যায়; এখন আমি কোন চাষাবাদ করতে পারছি না ৷ সেজন্যে বালি গুলো অপসারণ করে জমি পরিষ্কার করে চাষাবাদের উপযোক্ত করার জন তোফায়েলদের দিছি ৷ আমরা জমি মালিকরা স্বপ্রনোদিত হয়ে তাদের দায়িত্ব দিয়েছে ৷ এসব অপসাংবাদিকতা রোধ করার জন্য সকলকে অনুরোধ করছি ৷
কালারমারছড়া চেয়ারম্যান তারেক বলেন, আমাকে তারা অবগত করছে ৷ আমি যতটুকু জানি তারা জমির মালিকদের কাছ থেকে ভাড়ায় নিয়ে বালি উত্তোলন করছে ৷
মহেশখালী উপজেলা এসিল্যান্ড থেকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি ব্যস্ত আছি ফোন রাখি বলতে কল কেটে দেন ৷
জমির মালিকদের তালিকা:
১৷ দরবেশ আলী, পিতা- মৃত আশরফ আলী ৷ ২৷ মৌলভী মৃত জোনাব আলী, ৩৷ মাস্টার কবির আহমদ, পিতা- মৃত কাছিম আলী, ৪৷ উম্মেত আলী, পিতা- মৃত তালেব আলী ৷ ৫৷ লকিয়ত উল্লাহ, পিতা- আবুল হাসেম ৷ ৬ ৷ আব্দুল হান্নান(বাদল), পিতা- মৃত দৌলত মিয়া, ৭৷ আব্দুল্লাহ, পিতা- মৃত নুরুল আলম, ৮৷ নাজির আহমদ, পিতা- মৃত কবির হোসাইন ৷ ৯ ৷ মীর কাসেম, পিতা- মৃত নুর আহমদ ৷ ১০৷ আকতর হোছাইন, পিতা মৃত কাছিম আলী, ১১৷ জাগের হোছাইন(সাবেক মেম্বার), পিতা- মৃত কাছিম আলী ৷
মৌজা: কালারমারছড়া, বিএস খতিয়ান নং ৩৬, ৬৩৭, বিএস দাগ নং ৭১৩৩ ৷ আরএস খতিয়ান নং ৮৮৬, আরএস দাগ নং ৬৮২৬, এমআরআর খতিয়ান নং ৮৫৫৷