আজ ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আনোয়ারা প্রতিনিধি:
আনোয়ারায় ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফ উদ্দিন হত্যার ঘটনায় পাঁচজনকে আসামী করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আশরাফ উদ্দিনের পিতা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে এই অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযুক্তরা হলেন, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের উপ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক নয়ন সরকার (২৯),পূর্ব ডুমুরিয়া গ্রামের আলি আকবরের পুত্র মো. রাকিব (২৫), বাঘখাইন গ্রামের অমিনেষ বড়ুয়ার ছেলে নিসান বড়ুয়া (২৭), পূর্ব রুদুরা গ্রামের এম এ হাশেমের পুত্র মহিউদ্দিন মানিক (৩৩), পটিয়া ধলঘাট এলাকার অমর নন্দীর পুত্র অঙ্কন নন্দী (২০)। অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে।
এ ঘটনায় কাউকে এখনো পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। আশরাফ উদ্দিনের মরদেহ গতকাল চমেক হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নিজ বাড়িতে আনা হয়। বিকাল পাঁচটায় তার জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। অভিযুক্তদের বহিস্কারের সুপারিশ কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ।
এদিকে গতকাল দুপুরে আশরাফ উদ্দিনের বারখাইনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার আত্বীয় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার মা অংকুর আহাজারি করছেন। তার দুই বোন জোবায়দা ও জুলেখা বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। তার বড় ভাই আসিফ উদ্দিন ভাইকে হারিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে গেছেন।
আশরাফ উদ্দিনের মা অংকুর বলেন, আমার ছেলে কোনো অন্যায় করলে তাকে হাতপা ভেঙ্গে পঙ্গু করে দিত। অন্তত আমি তাকে চোখে দেখতে পেতাম। আমার কাছ থেকে চুল কাটার জন্য একশ টাকা চাইল। আমি টাকা দিলাম। আমার ছেলে আর টাকা চাইবেনা।
জানা যায়, প্রধান আসামী নয়ন আর আসিফ দুইজনই দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরের অনুসারী। একসময় তাদের মধ্যে সু সম্পর্ক ছিল। কিন্তু গত এক বছর ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন কারণে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। কয়েক মাস আগে বিরোধের জের ধরে নয়ন সরকার ও আসিফের গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তখন নয়ন সরকারের গ্রুপ নিহত আশরাফকে ছুরি নিয়ে ধাওয়া করছিল বলে জানা যায়।
যেভাবে খুন হয় আশরাফ উদ্দিন: প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা যায়, গত ১৯ ফেব্রæয়ারি ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টায় নয়ন সরকার তার অন্য আসামীদের নিয়ে জয়কালী বাজারে অবস্থান নেয়। আশরাফ উদ্দিন মা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে কারো সাথে গল্প করছিলেন। এমন সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে দ্রæত তাকে পাঁচজন মিলে ঘিরে ধরে চারজন আশরাফের হাত ধরে রাখে এবং অপরজন তার বাম রানের গোড়ায় ছুরিকাঘাত করে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আশরাফ উদ্দিন সেখান থেকে হেটে মোড়ে কোনোমতে প্রধান সড়কে আসেন। এসময় আশরাফের বন্ধু ও স্থানীয়রা তাকে উদ্বার করে আনোয়ারা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত চমেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৯ টায় চিকিৎসক আশরাফকে মৃত ঘোষণা করেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আশরাফের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক বোরহান উদ্দিন।
গতকাল দুপুরে উপজেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী আশরাফ উদ্দিনের মৃত্যুতে তার সহকর্মীরা আনোয়ারা জয়কারী বাজার ও প্রধান আসামী নয়ন সরকারের বাড়ির পাশে সিংহরা রাস্তার মাথায় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নয়ন সরকারের গ্রেফতারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও দোকানপাট ভাঙচুরের চেষ্টা করলে আনোয়ারা সার্কেল এ এস পি হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ কওে দেন। এসময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াছিন হিরু,আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ব্যক্তিগত সহকারি বোরহান উদ্দিন চৌধুরী মুরাদ উপস্থিত ছিলেন।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের বলেন, ঘটনাটি খুবই দু:খজনক। এটা তাদেও ব্যক্তিগত দ্বন্ধ,দলীয় নয়। অভিযুক্তদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। যেকোনো সময় সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম দিদারুল ইসলাম সিকদার বলেন, আশরাফ হত্যার ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়েছি, থানায় মামলা হয়েছে।