ক্ষুদে গানের প্রতিযোগিতা ও কিছু কথা :

আজকাল চারিদিকে যে হারে,যে ভাবে ক্ষুদে কন্ঠের গানের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে,তাতে সামান্য ক’দিন পরই সিনিয়রদের থোরাই কেয়ার করবে ওরা।প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জিতার ফলে স্থানীয় লেভেল থেকে উচ্চ লেবেল পর্যন্ত সিনিয়রদের কদর কমে যাবে বলে ধারণা করছি।কেননা,ওরা তো অল্প বয়সে আইডল হওয়ার জেরে আত্মদম্ভে ভুগবে।

তাছাড়া গান নিয়েই শুধু এত এত প্রতিযোগিতা হবে কেন!প্রতিযোগিতার আর কি কোন বিষয় নেই?অভিনয়,চিত্রাঙ্কন,যন্ত্রসঙ্গীত,খেলাধূলা সহ অন্য বিষয়েও তো প্রতিযোগিতা হতে পারে।

আগের সিনিয়র শিল্পীরা ক্যাসেট,টেলিভিশন অনুষ্ঠান,ছোটপর্দা ও বড়পর্দায় মৌলিক গান করতে করতে জনপ্রিয় হয়েছেন।এতে তাদেরকে গানের সাধনার পাশাপাশি মৌলিক গানে হাড়ভাঙ্গা খাঁটুনি খাঁটতে হয়েছে।অথচ আজকাল প্রাইমারীর বাচ্চারাও সিনিয়রদের গান গেয়ে বিরাট তারকাখ্যাতি নিয়ে যাচ্ছে।যা আমার কাছে বেশ দৃষ্টিকটু মনে হচ্ছে।

তাছাড়া জনপ্রিয় বিচারকদের সারিতে অখ্যাত বা বিতর্কিত কিছু সাংস্কৃতিক ব্যক্তি,সঙ্গীতসংশ্লিষ্টতাহীন ব্যক্তি সহ সামান্য জনপ্রিয় সিনিয়রও বিরাট আয়েশের আসনে বসে বাবুগিরি ফলাচ্ছেন।তারা নিজেদের গান গাইতে ক্ষুদেদের উৎসাহিত করছেন।ওদের বেলকিবাজির কারণে আজ বাংলা মৌলিক গানের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।তাদের জন্যই মৌলিক গানহীন শিল্পীও তাঁরকা বনে যাচ্ছে।
সিনিয়র কিছু তাঁরকাদের ইন্ধনে সঙ্গীতাঙ্গনকে ব্যবসার আড্ডাখানা বানিয়ে ছেড়েছে কেউ কেউ।সঙ্গীতের সাথে দুই যুগেরও বেশি মিতালি গড়েও কেউ একটা প্রোগ্রাম পাচ্ছেনা।অন্যদিকে দুই বছর গান শিখেই মৌলিক গান ছাড়াই কেউ মহাতাঁরকা,প্রোগ্রামের শেষ নেই।আজকাল জনপ্রিয় ফোকতাঁরকা মমতাজের নাতির বয়সী শিল্পীও বুকটা ফাইটা যায় বলে গান করছে।অর্থাৎ মমতাজ হতে যে সাধনা,শ্রম ও মৌলিকত্ব দরকার ছিল,তা আজিকার ক্ষুদেদের তা লাগছেনা।সুতরাং অল্পতেই বুক ওদেরইতো ফাইট্টা যাওয়ার কথা!

তাছাড়া প্রতিযোগিতাগুলোতে কখনো পক্ষপাতিত্ব করা হয় বলে কারো ধারণা।জোর করে বিচারকরা তাদের গান গাইতে বলেন,এমন কথাও উঠেছে।

অচিরেই কমানো হোক এসব গানবাজী।এতে গান হবে মৌলিক,বাংলা গান হবে আরো সমৃদ্ধ।গানের মান বৃদ্ধিতে নিম্নোক্ত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে :
১/প্রতিযোগিতাগুলোতে মৌলিক গান গেয়েই অংশগ্রহণ করতে হবে।যাদের বেশ কয়েকটি মৌলিক গান অন্তত নেই,তারা অংশগ্রহণ করতে পারবেনা।এতে গীতিকার,সুরকার ও অন্যান্যদের মূল্যায়ণ করা হবে।
২/প্রতিযোগিতা হবে ১৮ বছর বয়সের বেশি বয়সীদের নিয়ে।
৩/বিচারক হিসেবে গীতিকার,সুরকার ও যন্ত্রশিল্পীদের সমানুপাতিক হারে রাখতে হবে।
৪/গীতিকার,সুরকারের নামোল্লেখ করে প্রতিযোগিতায় গাইতে হবে।
৫/যেসব প্রতিযোগি চূড়ান্ত পর্বে যাবে,তাদের গানের শিক্ষক,গীতিকার,সুরকারদেরও মূলমঞ্চে ডাকতে হবে।
৬/রবীন্দ্রনাথ,নজরুল,লালন,হাসন,করিম,রাধারমনের গান তাদের নামে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতাতেই গাইতে পারবে শুধু।
৭/এসএমএসে ভোটিং বাদ দিতে হবে।
৮/আয়োজক ও বিচারকদের পেছনেও বিশেষ তদন্ত টিম কাজ করতে হবে,যাতে উল্টাপাল্টা না হয়।

আমরা চাই- বাংলা গান বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক,মৌলিক গানের কদর বাড়ুক,গানের কারিগর ও কলাকুশলিরাও মর্যাদা পাক,গানের প্রতিযোগিতার নামে প্রহসন না হোক এবং গানের মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকুক।

লেখক : চাষা জহির,
গীতিকার ও নাট্যনির্মাতা