শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল -|- ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
hridoyechattogram.com - news@hridoyechattogram.com - www.facebook.com/hridoyechattogram/

আজ জামিজুরী গণহত্যা দিবস, পাক হানাদার বাহিনীর লোমহর্ষক নৃশংসতার বিভীষাকাময় কালরাত্রি

প্রকাশিত হয়েছে- রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯

রাজীব চক্রবর্ত্তী
চন্দনাইশ প্রতিনিধি:

‘যারা গণহত্যা করেছে শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে ক্ষেত ও খামারে আমি অভিশাপ দিচ্ছি নেকড়ের চেয়েও অধিক পশু সেই সব পশুদের। ফায়ারিং স্কোয়াডে ওদের সারিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে নিমেষে ঝাঁ ঝাঁ বুলেটের বৃষ্টি ঝরালেই সব চুকে বুকে যাবে তা আমি মানি না হত্যাকে উৎসব ভেবে যারা পার্কে মাঠে ক্যাম্পাসে বাজারে বিষাক্ত গ্যাসের মতো মৃত্যুর বীভৎস গন্ধ দিয়েছে ছড়িয়ে আমি তো তাদের জন্য অমন সহজ মৃত্যু করি না কামনা।’#

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার একমাত্র জামিজুরী বধ্যভূমি পাক হানাদার বাহিনীর লোমহর্ষক নৃশংসতার স্বাক্ষী। ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল, বাংলা ১৩৭৮ সালের ১৪ই বৈশাখ আজকের এইদিনে পাক হানাদার বাহিনী তৎকালীন পটিয়া (বর্তমানে চন্দনাইশ) থানার দোহাজারী’র জামিজুরী গ্রামে নারকীয় তান্ডবলীলা চালিয়ে ১৩ জন নিরপরাধ নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এতে শহীদ হন ডাঃ বগলা প্রসাদ ভট্টাচার্য, কবিরাজ তারাচরণ ভট্টাচার্য, মাষ্টার প্রফুল্ল রঞ্জন ভট্টাচার্য, মাষ্টার মিলন ভট্টাচার্য, বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য, রেনু বালা ভট্টাচার্য, ডাঃ করুনা কুমার চৌধুরী, হরি রঞ্জন মজুমদার, মহেন্দ্র সেন, নগেদ্র ধুপী, রমনী দাশ, অমর চৌধুরী ও মনীদ্র দাশ। স্থানীয় এলাকাবাসী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশগুলো একত্রিত করে একটি গর্তে সমাধিস্থ করে। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা সুভাস মজুমদার (নলুুুয়া) ও মুক্তিযোদ্ধা বিমল দাশ (আমিরাবাদ) এর দেহাবশেষও এখানে সমাধিস্থ করা হয়। স্বাধীনতার পর স্থানীয় ক’জন প্রগতিশীল তরুণের অক্লান্ত পরিশ্রমে সমাধিস্থলে গড়ে তোলা হয় বধ্যভূমি। স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, দীর্ঘদিন অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকার পর ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ তৎকালীন চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ রহিম জামিজুরী বধ্যভূমির ফলক উম্মোচন করেন। এরপর ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের অর্থায়নে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে বধ্যভূমি স্থলে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করে দেয়া হয়। জামিজুরী বধ্যভূমি পরিদর্শনে গিয়ে কথা হয় শহীদ ডাঃ বগলা প্রসাদ ভট্টাচার্যের ছেলে চাগাচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (অবঃ) প্রধান শিক্ষক সুশীল কান্তি ভট্টাচার্য’র সাথে। তিনি বলেন, “স্বাধীনতার অনেক বছর কেটে গেলেও ১৯৭১সালের ২৮ এপ্রিল লোমহর্ষক হত্যাকান্ডে নিহতদের পরিবারগুলো আজও পায়নি শহীদ পরিবারের মর্যাদা। পায়নি সরকারি-বেসরকারি কোন সাহায্য কিংবা অনুদান।” জামিজুরী শহীদ স্মৃতিসৌধ সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে স্মৃতিসৌধ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় বলেও জানান তিনি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “তরুণ প্রজন্মের অনেকেই জানেনা জামিজুরীতে একটি বধ্যভূমি আছে। তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে কার্যকর ভূমিকা নেয়া প্রয়োজন অগ্রজদের। সরকারি উদ্যোগে বধ্যভূমিটি রক্ষণাবেক্ষণেরও দাবি জানান তিনি। আরো উল্লেখ্য যে,জামিজুরী গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আজ ২৮ এপ্রিল সকালে জামিজুরী গ্রামবাসীর পক্ষে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা জানান দোহাজারী জামিজুরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু বিষ্ণুযশা চক্রবর্ত্তী,শহিদ পরিবারের সন্তান সুশীল ভট্টাচার্য,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজের শিক্ষক কৃষ্ণ কান্তি ঘোষ,সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা প্রবীণ দাশসহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।