আজ ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
মো. এরশাদ আলম, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)
দেশের অধিকাংশ গ্রাম অঞ্চলের মানুষ চাষাবাদের উপর নির্ভর করে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এক সময় শীত মৌসুমে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের হাঙ্গর খালের পার্শ্ববর্তী হাজার হাজার হেক্টর ফসলি ক্ষেত পানির অভাবে কৃষি শূন্য হয়ে পড়ে থাকতো। ওই মৌসুমে হাঙ্গর খালে পানি না থাকার কারণে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহকারী অনেক জেলে পরিবার অনাহারে দিনাতিপাত করতেন।
এমন পরিস্থিতিতে সরকার গত ২০১৭ সালের দিকে পদুয়া ৭নং ওয়ার্ডের ফরিয়াদিকুল এলাকায় হাঙ্গর খালের উপর এলজিইডি’র বাস্তবায়নে একটি রাবার ড্যাম প্রকল্প নির্মাণ করেন। যা ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে স্থানীয় সাংসদ প্রফেসর ড. আবুরেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
রাবার ড্যাম চালু হওয়ার পর থেকে পানি জমাট করলে ৮নং ওয়ার্ড এলাকায় হাঙ্গর খালের ছোট শাখা কৈয়মারা খালের বাঁধ ভেঙ্গে বর্তমানে ওই রাবার ড্যামটি অনেকটা কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় অসহায় কৃষকদের জন্য।
গত ১৫ জানুয়ারি সকালে নাওঘাটা মাঝির পাড়া এলাকায় শতশত কৃষক তাদের ফসল বাঁচাতে কৈয়মারা খালের বাঁধে একটি সুইচগেট নির্মাণের দাবী জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদ সহ সকল উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করে মানববন্ধন করেছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হাঙ্গর খালের পানি ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটির ভুল পরিচালনায় কৃষকদের লাভের চেয়ে ক্ষতি হচ্ছে বেশি। জমানো পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ফরিয়াদিকুল এলাকার কৃষকেরা লাভবান হলেও নাওঘাটা মাঝির পাড়া সহ বিভিন্ন এলাকার শতশত কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এমন দূর্ভোগ থেকে বাঁচতে চায় স্থানীয় শতশত কৃষকেরা।
জানাযায়, গত কয়েকদিন আগে রাবার ড্যাম চালু করলে রাবার ড্যামের জমানো পানি অতিরিক্ত হয়ে পাশ্ববর্তী কৈয়মারা খালের অস্থায়ী বাঁধ ছিড়ে প্রায় ২০থেকে ৩০একর ফসলি জমি ফসল সহ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে কয়েকশত কৃষকের কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব হারিয়ে তারা এখন সম্পূর্ণ নিস্ব হয়ে বসে আছে। কারণ, তাদের জীবীকা নির্বাহ করার একমাত্র উপায় এবং পথ হচ্ছে কৃষি কাজ। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া জমিতে ধান ক্ষেত, আলু,বেগুন, টমেটো, সিম,ফুলকপি, পাতাকপি, মরিচ, পেয়াজ সহ বিভিন্ন জাতের শাক এবং সব্জির চাষ রয়েছে। ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষের আইয়ের উৎস কৃষি কাজ। প্রতিবছর এসব কৃষি জমিতে চাষাবাদ করে পরিবারের সদস্যদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেন কৃষকেরা। জমি গুলো ডুবে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত শতশত কৃষকেরা বর্তমানে দিশাহারা হয়ে বসে আছে। পরিবারের সদস্যদের জন্য দুমুঠো খাবার জোগাড় করার সমর্থনও অনেকের নেই।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন ব্যাংক এবং এনজিও থেকে কৃষি লোন নিয়ে চাষাবাদ করেছে বলেও জানাগেছে।
রাবার ড্যামের জমানো পানি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় অনেক অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ করতে অসুবিধা হচ্ছে কৃষকদের। তাদের দাবী একটাই, রাবার ড্যামে হাওয়া কমিয়ে হয়তো পানি কমানো হোক, নয়তো কৈয়মারা খালে একটি স্থায়ী সুইচগেট নির্মাণ করা হোক।