রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল -|- ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
hridoyechattogram.com - news@hridoyechattogram.com - www.facebook.com/hridoyechattogram/

দোহাজারী পৌরসভার “আঁধারে আলো” সংগঠনটি মানবতার অনন্য নির্দশনসরূপ

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ১৫ মে, ২০১৯

রাজীব চক্রবর্ত্তী:

রক্তদান সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও বৃদ্ধি এবং রক্তদানকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১২ সালের ০২ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভায় কিছু তরুণের হাত ধরে “আঁধারে আলো” নামের একটি সংগঠন যাত্রা শুরু করে। আঁধারে আলো দক্ষ ও বিচক্ষণ সাহসী তরুণদের দ্বারা পরিচালিত সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং স্বেচ্ছাসেবী একটি সংগঠন।এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য, রক্তদানে সক্ষম প্রতিটি মানুষকে রক্তদানে উৎসাহ প্রদান ও উদ্বুদ্ধকরণ। আসুন তাহলে আঁধারে আলো সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই:-
এক নজরে আঁধারে আলো:
সংগঠনের নাম : আঁধারে আলো (স্বেচ্ছায় রক্তদান সংগঠন)। প্রতিষ্ঠাকাল : ০২ ফেব্রুয়ারি,২০১২ ইং মূলমন্ত্র : মুমূর্ষু জীবন বিপন্ন মানবতা চারদিক অন্ধকার কালো। রক্ত দিয়ে আনব সে প্রাণ জ্বলবে আঁধারে আলো।
বৈশিষ্ট্য : দক্ষ,মেধাবী ও বিচক্ষণ তরুণদের দ্বারা পরিচালিত সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
ক্ষেত্র:- সারা বাংলাদেশ
আর্থিক যোগান : এই সংগঠনের সদস্যরা নিজেরাই অর্থ যোগান দিয়ে মানবসেবার আর্থিক খাতে ব্যয় করে থাকে।
কেন স্বেচ্ছায় রক্তদান করবেন: আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ১০/১২ লক্ষ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। আর এই প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ হয় খুবই সামান্য। আর যতটুকু সরবরাহের ব্যাবস্থা হয় তার ৬০ ভাগই পুরণ হয় পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে। পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে রক্ত গ্রহণ একদিকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ অন্যদিকে তেমনি অসাস্থ্যকর। কারণ পেশাদার রক্তদাতারা গ্রহণ করে বিভিন্ন ড্রাগ এবং শরীরে বহন করে হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইডস, সিফিলিস এর মত জীবন ধ্বংশকারী রোগের জীবাণু। যে কারণে আমাদের দেশে রক্তের অভাবে প্রতিনিয়ত অসংখ্য রোগী মৃত্যুবরণ করে। একবার ভেবে দেখুন আজ যে রোগীটা মারা যাচ্ছে সে যদি আমার মা হত বা বাবা হত তাহলে…….
রক্তদানের যোগ্যতা: ১. বয়স ১৮ থেকে ৫৭ বছরের মধ্যে হতে হবে (নারী ও পুরুষ)। ২. ওজন ৪৮ কেজি (পুরুষ) ৪৫ কেজি (নারী)। ৩. সময় ১২০ দিন পর পর অর্থ্যাৎ ৪ মাস পর পর। ৪. শারিরীকভাবে সুস্থ্য থাকতে হবে।
রক্তদান সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত কিছু ভূল ধারণা:
রক্তদান করলে শারিরীকভাবে অসুস্থ্য হওয়া, শরীর মুটিয়ে যাওয়া, শরীর শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের ভূল ধারণা মানুষের মধ্যে কাজ করে, যার পুরোটাই আমাদের রক্তদান সম্পর্কে অসচেতনতা ও ভয় থেকে সৃষ্টি। রক্তদান করলে শারিরীকভাবে কোন সমস্যার সৃষ্টি বা অসুস্থ হওয়া এর কোনটাই হয় না। বরং রক্তদান করলে শারিরীকভাবে বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়, মানসিক তৃপ্তি পাওয়া যায় যা অন্য কোন ভাবে মানুষের উপকারের মাধ্যমে অর্জন সম্ভব নয়।

রক্তদানের উপকারিতা: ১. প্রতি চার মাস অন্তর রক্ত দিলে দেহে রক্ত কণিকা সৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ২. নিয়মিত রক্তদানে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। ৩. নিয়মিত রক্তদানে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। (বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতামত ১-৩) ৪. রক্তদানে কোন ধর্মীয় বিধিনিষেধ নেই। ৫. রক্তদানের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিভিন্ন রোগের রিপোর্ট পেতে পারেন (হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইডস, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া) যা আপনাকে শারিরীক সুস্থ্যতার ব্যাপারে সচেতন রাখবে। আঁধারে আলো (স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন) আমাদের প্রিয় দোহাজারী পৌরসভায় সেই ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত মানবতার অপরুপ নিদর্শন মুমূর্ষেুর জন্য সরবরাহ করছে বছরে প্রয়োজনীয় রক্তের চাহিদা, বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে সকল ধরণের মানুষকে তার নিজ রক্তের গ্রুপ। দীর্ঘ সাত বছর এই স্বপ্নযাত্রায় আঁধারে আলো লক্ষাধিক মানুষকে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ জানিয়ে দিয়েছে ও রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং ৩ হাজার ব্যাগ রক্ত বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে।
ফেসবুকে আঁধারে আলো: বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি আঁধারে আলো একটি অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের মাধ্যমে Online এ রক্তের চাহিদা পূরণের প্রয়াস চালাচ্ছে। আসুন আমরা সকলে মিলে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের এমন একটা পেজে যুক্ত হয় যেখান থেকে আমরা দেশের যেকোন স্থানে যে কোন গ্রুপের রক্তের চাহিদা পুরন করতে পারি। রক্তের অভাবে যেন হারাতে না হয় কোন মা, বাবা, ভাই, বোন বা সন্তানকে। “আমাদের অনুভূতিতে মানুষের ভালোবাসা আমরা অনুভব করি এ দেশের মাটির ঋণ আমরা কাজ করি আমাদের দায়বদ্ধতায়”।

আঁধারে আলো এর প্রতিষ্টাতা সভাপতি খন্দকার এস.এ মাহিনের সাথে কথা বলে জানা যায়,সংগঠনটির শুরুতে প্রতিষ্টাতা সদস্য ছিল মোহাম্মদ ইলিয়াস ও নেজাম উদ্দীন খোকা। প্রতিষ্টাতা ৩ জন,প্রথম বছর সদস্য সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৩৪ জন যা বর্তমানে ৩২০ জন। তিনি আরো জানান,শুরু থেকে এই পর্যন্ত ১৫টি গরীব অসহায় মেয়ের বিয়েতে আর্থিক সহযোগীতা, অসহায় রোগীকে আর্থিক সহযোগীতা, এছাড়াও বিভিন্ন সময় ফ্রি ব্লাড টেষ্ট,কোরবানের মাংস বিতরণ,ইফতার বিতরণ,ইফতার মাহফিল সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়মিত পালন করে আসছে মানবতার সংগঠন আঁধারে আলো।
আঁধারে আলো”র এর এই মহৎ প্রয়াসকে সফল করার জন্য সকল সদস্য,বন্ধু, সম্মানিত রক্তদাতা এবং শুভানুধ্যায়ীদের নিকট স্বেচ্ছায় রক্তদানকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিনত করতে সহায়তা করতে অনুরোধ করেন খন্দকার এস. এ মাহিন।
পরিশেষে বলবো,একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের আশীর্বাদে জীবন ও জগতের উন্নতি হওয়া সত্বেও রক্তের কোন বিকল্প আবিস্কার হয়নি। রক্তের বিকল্প শুধু রক্ত যা টাকার পরিমাপে মূল্যায়ন অসম্ভব। প্রতিনিয়ত রক্তের অভাবে ঝরে যায় হাজারো প্রাণ। কিন্তু সামাজিকভাবে পশ্চাদপদ বাংলাদেশের সমাজে স্বেচ্ছায় রক্তদানের সংখ্যা নিতান্তই অপ্রতুল। এর কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা রক্তদান সম্পর্কে সচেতন নই, রক্তদানের কথা শুনলে আমরা ভয় পাই। বছরের সকল নারী ও পুরুষ শারিরীকভাবে সুস্থ থাকলে ১২০ দিন পর পর এক ব্যাগ রক্ত দান করতে পারে। মানবতার অনন্য নির্দশন ‘আঁধারে আলো সংগঠনটি এগিয়ে চলুক অগ্রযাত্রার স্রোতে।