রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল -|- ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
hridoyechattogram.com - news@hridoyechattogram.com - www.facebook.com/hridoyechattogram/

পৌরসভার সুফল পাচ্ছে না দোহাজারীর বাসিন্দারা

প্রকাশিত হয়েছে- সোমবার, ২০ মে, ২০১৯

রাজীব চক্রবর্ত্তীঃ

চট্টগ্রাম জেলার বর্তমান দোহাজারী পৌরসভা পূর্বে চন্দনাইশ উপজেলার আওতাধীন ৯ নং দোহাজারী ইউনিয়ন পরিষদ হিসেবে পরিচিত ছিল। বর্তমানে সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড সহ অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৭ সালের ১১ মে দোহাজারী ইউনিয়নকে দোহাজারী পৌর এলাকা ঘোষণা করা হয় । এটি দেশের ৩২৭ তম পৌরসভা। এই পৌরসভার প্রশাসনিক কার্যক্রম চন্দনাইশ উপজেলার আওতাধীন। এটি জাতীয় সংসদের ২৯১ নং নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১৪ এর অংশ। এ পৌরসভার আওতাধীন গ্রাম/এলাকাসমূহ হল:দোহাজারী,চাগাচর,ঈদপুকুরিয়া,
জামিজুরী,দিয়াকুল,রায়জোয়ারা,
হাতিয়াখোলা,কিল্লাপাড়া,বারুদখানা,হাছনদণ্ডী
(পূর্বে সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত)।
উচ্চ আদালতে রিট, সীমানা জটিলতা, বিভিন্ন কারনে দোহাজারী পৌরসভা প্রতিষ্ঠার দুই বছরের বেশী হলেও নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। পৌরসভার আয়তন বৃদ্ধি ও হ্রাসসংক্রান্ত জটিলতা, পৌরসভা গঠনের বিরুদ্ধে আদালতের স্থগিতাদেশ এবং ওয়ার্ড বিভাজনও নির্বাচন বন্ধে ভূমিকা রেখেছে।

দুই বছর আগে দোহাজারী ইউনিয়নের অন্তর্গত বিভিন্ন ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয় দোহাজারী পৌরসভা। ইউনিয়ন থেকে পৌরসভা হওয়ায় উন্নয়নের আশায় বুক বেঁধেছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু কাগজে-কলমে পৌর নাগরিক হলেও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হয়নি তাদের। অথচ তাদের ঘাড়ে ঠিকই বাড়ছে করের বোঝা। ইউনিয়ন থাকাকালে ২০০ টাকার ট্রেড লাইসেন্সে পৌরসভাকে এখন দিতে হচ্ছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। এ নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই স্থানীয়দের। মশার যন্ত্রণা, ড্রেনেজ সমস্যা, বিশুদ্ধ পানীয়জলের অভাবসহ বেশিরভাগ এলাকায় সড়কবাতি নেই; নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কার হয় না, এমনকি প্রয়োজনীয় নালা-নর্দমা ও ফুটপাতও নেই। একটু বৃষ্টিতেই দোহাজারী পৌরসভার প্রধান সড়কগুলো পানিতে ডুবে যায়।
জামিজুরী ৬ নম্বর ওয়ার্ডের একজন বাসিন্দা বলেন, পৌর শহর হলেও বাড়তি কোনো সুযোগ- সুবিধা নেই। আগে ইউনিয়নবাসী ছিলাম, এখন পৌরসভার নাগরিক হয়েছি,পার্থক্য শুধু এটাই। কিন্তু কোনো স্থাপনা করতে হলে পৌরসভাকে কর দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া তার গ্রামে কোনো বাতি নেই। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ পৌরবাসী।
পৌর বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, পৌরসভার নাগরিক সুবিধা না বাড়লেও বেড়েছে কর। প্রত্যয়ন পত্র,ওয়ারিশন সার্টিফিকেট,জন্মনিবন্ধন থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কিছু সংগ্রহ করতে গুনতে আছে বাড়তি টাকা। আগে একটি ট্রেড লাইসেন্স করতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা লাগত। এখন লাগে তার অনেক গুন বেশী টাকা। এখনো একটি পাবলিক টয়লেট চালু হয় নি। এ ছাড়া যেখানে- সেখানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। রাতে মশার কামড়ে টেকা দায়।
৪০ দশমিক ৭৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দোহাজারী পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালে। প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ৫০০ ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে পৌরসভাগুলো ক, খ ও গ তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত । খ ও গ শ্রেণীভুক্ত পৌরসভায় প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণজনিত সুযোগ-সুবিধা ও কিছুটা অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় জনসমাগম ও ঘনত্ব থাকলেও, এগুলোতে এখনও জনপ্রতিনিধি ও জনগণের মধ্যে কাঙ্খিত শহুরে সংস্কৃতি ও সঠিক দায়িত্ববোধ পুরোপুরি গড়ে উঠেনি। ফলে দোহাজারী পৌরসভা যেন এক বিড়ম্বনা ও নামের প্রতি অসম্মান। পৌর বাসিন্দাদের জন্য সুশাসন, বিভিন্ন সেবামূলক কাজ ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং জননিরাপত্তা ও জনগণের স্থায়িত্ব বা স্থিতিশীলতার উদ্দেশ্যে মূলত পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু এ উদ্দেশ্যগুলো অনেকাংশে পূরণ করার জন্য যে শর্তাবলী পালনীয় তা বাস্তবে অদৃশ্যমান।

এ উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়নে পৌরসভাকে বহুবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হয়, যেমন-রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, পার্ক, মাঠ, পানির ট্যাঙ্ক, পাবলিক টয়লেট, নালা-নর্দমা, পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ইত্যাদি নির্মাণ; রাস্তাঘাট আবর্জনা ও ধূলা-কাদা মুক্ত রাখা; বিদ্যুত ও পানি সরবরাহ; শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন ও ক্রীড়া সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি; পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন; প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অগ্নিকান্ডের মোকাবেলা এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন; দরিদ্রদের স্বার্থ-সংরক্ষণ ও বস্তি এলাকার উন্নয়ন; জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ও নাগরিক সনদ প্রদান; ঐতিহাসিক স্থাপনা তৈরি ও সংরক্ষণ; পৌর এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নগর পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু আবাসন ব্যবস্থা; ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান ও শ্মশানখোলার ব্যবস্থাপনা; হাট-বাজার, শিল্প-কল-কারখানা ও কসাইখানার ব্যবস্থাপনা; সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। এ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যাদির মূল অন্তরায় সুদক্ষ, নীতিবান ও নিবেদিতপ্রাণ জনপ্রতিনিধির অভাব এবং পর্যাপ্ত অর্থের অভাব।
এ পৌরসভায় কোন ডাস্টবিন নেই, নেই গণশৌচাগার। অপর্যাপ্ত ড্রেন থাকলেও, ময়লা পানি নিষ্কাশনের জন্য সংযুক্ত নেই কোন মাস্টারড্রেন বা খাল-নদীর সঙ্গে। এখানে ঘর-বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে পৌর আবাসন বিধি না মেনেই। ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। দোহাজারী পৌরবাসীর এখন একমাত্র চাওয়া নির্বাচন কমিশন, সরকার ও প্রশাসনের বিধিবদ্ধ আচরণের মাধ্যমে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। যার মাধ্যমে শুধুমাত্র জনপ্রিয়তা যাচাই নয়, নির্বাচনী প্রক্রিয়াটির আস্থাও সুদৃঢ় হবে এবং দোহাজারী পৌরসভা একটি মডেল পৌরসভায় পরিণত হবে।