রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল -|- ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
hridoyechattogram.com - news@hridoyechattogram.com - www.facebook.com/hridoyechattogram/

দোহাজারী পৌর শহরের স্টেশন রোড রাস্তায় অরক্ষিত রেলক্রসিং ॥ দুর্ঘটনার আশংকা

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৯

রাজীব চক্রবর্ত্তী: চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌর শহরে উপজেলা স্টেশন রোড রাস্তায় রেলক্রসিং অরক্ষিত হয়ে পড়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন সহ পথচারীরা। যে কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দোহাজারী পৌর শহরের স্টেশন রোডের রেলক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন আন্তঃনগরসহ যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। এই রেলক্রসিং দিয়ে পৌর শহর প্রবেশ করে জামিজুরী,দিয়াকুল যেতে যাতায়াত করে রিকসা-ভ্যান, অটোরিকশা, ট্রাক ও পথচারীরা। রেলক্রসিং পার হলেই একটি দৈনন্দিন বাজার। দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে যানবাহন। ফলে রাস্তাটি সব সময় যানবাহন ও জনসাধারণে ব্যস্ত থাকে। রেল ক্রসিং উম্মুক্ত থাকার কারণে সব ধরনের যানবাহন ও পথচারিরা নিজ দায়িত্বে পারাপার হচ্ছে।
অরক্ষিত রেলক্রসিং এ গিয়ে দেখা গেছে, সড়কে যানবাহন ও জনসাধারন ট্রেন যাওয়া-আসা দেখলে বা আসার শব্দ শুনেও ব্রেরিয়ার বা গেট ম্যান না থাকায় দ্রুতগতিতে রেলক্রসিং পার হচ্ছে।

দেশে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ছে। রেলের দিকে সরকার দৃষ্টি দিয়েছে। ভবিষ্যতে রেলপথও বাড়বে। রেলপথের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এমনিতে রেলপথের একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সাধারণের প্রবেশ আইনত দন্ডনীয়। কিন্তু এই আইন বাংলাদেশের মতো দেশে মেনে চলা হয় কি? সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে লেভেলক্রসিং। দেশের ২ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার রেলপথে প্রায় ২ হাজার ৫৪১টি লেভেলক্রসিং রয়েছে। এর বেশিরভাগে কোনো গেট নেই। কোনো সংকেতবাতি তো দূরের কথা, নেই যান নিয়ন্ত্রণের কোনো কর্মী। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো রেললাইনের ওপর দিয়ে সড়ক নিয়ে যেতে হলে গেট নির্মাণ এবং কর্মী নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক সব স্থাপনা নির্মাণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থার। শুধু অবকাঠামো নির্মাণ করলেই হবে না, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কর্মীর বেতনসহ ১০ বছরের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ রেলওয়েকে দিলে তবেই সেখানে গেট নির্মাণের অনুমতি মেলে এবং কর্মী নিয়োগ হয়। এই জটিলতা এড়াতে অধিকাংশ স্থানেই রেললাইনের ওপর অননুমোদিতভাবে গড়ে ওঠে লেভেলক্রসিং।

বাংলাদেশে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের জন্য দুর্ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিষয়টি অনেকটা নৈমিত্যিক ঘটনায়ও পরিণত হয়েছে। দেশে রেলক্রসিংগুলো অনেকটা মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, সারাদেশে রেলওয়ে নেটওয়ার্কে মোট ২ হাজার ৫৪১টি লেভেলক্রসিং আছে। এর মধ্যে অনুমোদিত ক্রসিংয়ের সংখ্যা মাত্র ৭৮০টি। বাকি ১ হাজার ৭৬১টিই অনুমোদনবিহীন। আবার ৭৮০টি অনুমোদিত ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র ২৪২টিতে রক্ষী বা গেটকিপার আছে। হিসাব অনুযায়ী, ২ হাজার ২৯৯টি ঝুঁকিপূর্ণ লেভেলক্রসিং। এসব ক্রসিংয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। রেলপুলিশের তথ্যমতে, রেলপথে গত ৫ বছরে আড়াই শতাধিক ব্যক্তি ট্রেনে কাটা পড়ে কিংবা ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছে। এর বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে রেলক্রসিংয়ে। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, শুধু রেলক্রসিং নয়, বরং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে রেললাইনও। বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের দু’পাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ মার্কেট, হাট-বাজার, বড় বড় বস্তি। এছাড়া অস্থায়ী ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট তো রয়েছেই। অস্বীকার করার উপায় নেই, রেলের সম্পত্তি অনেকাংশেই বেদখল হয়ে গেছে প্রভাবশালীদের খপ্পরে পড়ে। মাঝেমধ্যে উদ্ধারের খবর বেরোলেও তা মূলত সাময়িক।

দোহাজারী রেললাইনের ওপর দিয়ে মূলত এলজিইডি, সড়ক ও জনপথের রাস্তা গেছে। এসব সংস্থার সঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষের সামান্য সমন্বয় করা গেলে দুর্ঘটনা অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। যেসব স্থানে লাইন আছে, ব্যয়সাপেক্ষ হলেও সেখানে উড়ালসড়ক নির্মাণ করা যেতে পারে। তাতে দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমে যাবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে রেল কর্তৃপক্ষ আপাতত সেখানে রেলগেট নির্মাণ করে কর্মী নিয়োগ দিতে পারে। এতেও দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। সর্বোপরি এসব লেভেলক্রসিং ব্যবহারকারীরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। রেলওয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে লেভেলক্রসিংয়ের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।