রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল -|- ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
hridoyechattogram.com - news@hridoyechattogram.com - www.facebook.com/hridoyechattogram/

চন্দনাইশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা কমিটির আচরণে অতিষ্ঠ শিক্ষকরা

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০১৯

মো: নুরুল আলম:(চট্টগ্রাম)
চন্দনাইশ উপজেলার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষকসহ সাধারণ শিক্ষকরা পরিচালনা কমিটির একশ্রেণীর সভাপতি-সদস্যের অত্যাচার-নির্যাতন, মানসিক-পীড়নের শিকার হচ্ছেন। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে আছে মোটা অংকের সংরক্ষিত তহবিল। সেই তহবিলসহ দৈনন্দিন আয়ের ওপর ভাগ বসাতে চান। এছাড়া শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য, উন্নয়নের নামে জমি কেনা, ভবন নির্মাণ, সংস্কার, মিটিং বাণিজ্যসহ নানা প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ লুটপাটের অভিযোগ আছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা পরিচালনা কমিটির এই অপকর্মে বাধা দেন তারাই প্রধানত হুমকি-নির্যাতনের মুখে পড়ছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে,চন্দনাইশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবাদী শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতও করা হচ্ছে। কোনো কারণে কোথাও কাউকে চাকরিচ্যুত করতে না পারলে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। ফলে সাধারণ শিক্ষকদের জীবন অনেকটাই অতিষ্ঠ।

প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ রতন দাশ বলেন, ইউনেস্কো ২০১৬ সালে ‘স্কুলস লিডারশিপ’ নামে একটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে। তাতে বলেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নেতৃত্ব দেবেন বা সভাপতির পদে আসীন হবেন অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষকরা। অংশীজন হিসেবে অভিভাবকরা মূলশক্তির ভূমিকা পালন করবেন। এছাড়া যারা আছেন তারা বহিরাগত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখি, বহিরাগতদের বেশির ভাগ লুটপাট আর অপকর্মে ব্যস্ত। ইউনেস্কোর প্রস্তাব অনুযায়ী পরিচালনা কমিটির বিধান তৈরি করে প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষকদের দিতে হবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানকে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। নইলে জাতীয় প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি, শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা নিশ্চিত, আত্মনির্ভরশীল শিক্ষার্থী তৈরি করা সম্ভব হবে না। আর এসব না হলে রূপকল্প ২০২১ বা ২০৪১ অর্জনও সম্ভব হবে না।

দেশে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাইস্কুল, দাখিল মাদরাসা, স্কুল ও কলেজ, আলিম মাদরাসা ডিগ্রি বা ডিগ্রিসহ অনার্স-মাস্টার্স কলেজ, ফাজিল বা ফাজিলসহ কামিল মাদরাসাপরিচালিত হয় পরিচালনা কমিটি দ্বারা। এসব পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বিধি ও নীতিমালা দ্বারা। সাধারণত রাজনৈতিক নেতা, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি, সাবেক আমলা ও শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা পরিচালনা কমিটির সভাপতি-সদস্য হয়ে থাকেন। স বধরনের প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক প্রতিনিধি এবং অভিভাবক প্রতিনিধি রাখা হয়। শিক্ষা বোর্ডের অধীন স্কুল, কলেজ ওমাদরাসায় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাব বেশি থাকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানে সাবেক আমলা-শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়ে থাকে।

তবে যেসব ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে আসছেন তাদের বেশির ভাগের শিক্ষাগত যোগ্যতা, নৈতিক মান, সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদি প্রশ্নবিদ্ধ।

উপজেলার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলেন, সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হচ্ছে বর্তমানে একশ্রেণীর অশিক্ষিত মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ভার নিয়েছেন। ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সদস্য পদে চলে আসছেন। অনেকেরই টার্গেট থাকে স্কুল-কলেজ থেকে অর্থ লুটপাট। তারা দলীয় রঙ মেখে শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করে থাকে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতেই আমরা চাকরি জাতীয়করণ দাবি করছি। এই দাবির নেপথ্যে তিনটি কারণ আছে। সেগুলো হচ্ছে, শিক্ষকের আর্থিক সচ্ছলতা, চাকরির নিরাপত্তা এবং সামাজিক মর্যাদা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুষ্ট সভাপতি ও সদস্যদের লুটপাটে প্রধান সহায়কের ভূমিকা পালন করেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক প্রতিনিধিরা। কোথাও অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষকরাও লুটপাটের প্রধান অংশীদার বনে যান। চতুর অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষক প্রতিনিধিরা লুটপাটের রাস্তা সুগম রাখতে পছন্দের সভাপতি ও অভিভাবক প্রতিনিধি নিয়ে পরিচালনা কমিটি গঠন করেন। এরপর মিলেমিশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তহবিল লুটপাট করেন। তবে নিবেদিতপ্রাণ সভাপতি এবং সদস্যও আছেন। অসৎ শিক্ষক-অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষকদের মোকাবেলা করে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিচ্ছেন তারা। কিন্তু এই সংখ্যা খুবই নগণ্য বলে জানা গেছে।

প্রবীণ শিক্ষক নেতা ফৌজুল আজিম বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান সমস্যা হল এর পরিচালনা কমিটি। যেমন কয়েকদিন আগে অতিরিক্ত ভর্তির ইস্যুতে রাজধানীর একটি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে, যেটা চাকরিবিধি অনুযায়ী লঘু শাস্তি। একই ঘটনায় এর আগে আরেক প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের এমপিও স্থগিত রাখা হয়েছিল। অথচ আমার জানামতে, ওই দুই প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত ভর্তির দায়ভার পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্যের। সুতরাং সভাপতিকে বিচারের অধীনে এনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বিধিমালা প্রণয়ন করা উচিত।