রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল -|- ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
hridoyechattogram.com - news@hridoyechattogram.com - www.facebook.com/hridoyechattogram/

জাতীয় পরিচয় পত্র থাকা সত্ত্বেও পাসপোর্টে পু’লিশ ভেরিফিকেশন কেন?

প্রকাশিত হয়েছে- বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০১৯

নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশে পাসপোর্ট করাতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয় পু’লিশ ভেরিফিকেশনের সময় — এমন অ’ভিযোগ বহু মানুষের।
তবে অনেকের মতে, জাতীয় পরিচয়পত্র দেবার সময়েই যেহেতু নাগরিকদের পরিচয় যাচাই হচ্ছে এবং সে তথ্য কর্তৃপক্ষের ডাটাবেসে রক্ষিতও আছে – তাই পাসপোর্ট করানোর সময় আবার নতুন করে পরিচয় যাচাইয়ের দরকার আছে কি?
বিশ্লেষকদের অনেকেই এ প্রশ্ন তুলছেন এখন।ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি’র ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন এমন মানুষের তিন-চতুর্থাংশকেই পু’লিশ ভেরিফিকেশনের সময় অনিয়ম ও হয়’রানির শিকার হয়ে ‘ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভূত টাকা’ দিতে হয়।
যেকারণে ইতিমধ্যেই দু’র্নীতি দমন কমিশন এবং টিআইবিসহ অনেক সংস্থা পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে পু’লিশ ভেরিফিকেশন ব্যবস্থা তুলে দেবার প্রস্তাব করেছে।

‘জনভোগান্তি’
নতুন পাসপোর্ট করতে গিয়ে পু’লিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে সাধারণ মানুষের অ’ভিযোগের শেষ নেই।ঢাকার একজন ব্যাংকার সানজিদা কিবরিয়া বলছিলেন, চার বছর আগে যখন পাসপোর্ট করান, সে সময় তাকে বেশ বিব্রত হতে হয়েছিল।
“শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য যখন আমাদের বাসায় আসেন, আমি অফিসে ছিলাম। তিনি আমা’র বাবা-মায়ের সঙ্গে বসে আমা’র এসএসসির সনদের সঙ্গে মিলিয়ে জন্মতারিখ ও অন্যান্য তথ্য মিলিয়ে নেন।”
এরপর আমা’র ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য এবং বাড়ির বিদ্যুৎ বিল দেখে ঠিকানার ব্যপারে নিশ্চিত হন তিনি।””কিন্তু কাজ শেষ হবার পরে চা-বিস্কিট খেয়েও তিনি কিছুক্ষণ বসে থাকেন। আমা’র বাবা-মা বুঝতে পারেননি উনার হাতে কিছু দিতে হবে।
এক পর্যায়ে উনি নিজেই বলেন যে তাকে ‘কনভেন্স’ দিতে হবে।”কনভেন্স বা যাতায়াতের ভাড়া হিসেবে হাতে টাকা তুলে দেবার পর স্থানত্যাগ করেন সেই কর্মকর্তা।দন্ত চিকিৎসক কায়ফি আজমীর অ’ভিজ্ঞতা একটু আলাদা।
পু’লিশ ভেরিফিকেশনের সময় তিনিও বাড়িতে ছিলেন না। তথ্য যাচাই হয়ে যাবার পর বাড়িতে আসা কর্মকর্তাকে ‘বখশিশ’ দিতে রাজি হননি আজমীর শ্বশুর।
“এরপর একমাস পেরিয়ে যায়, দুই মাস পেরিয়ে যায় – আমা’র আর পাসপোর্ট আসে না।আমি ও আমা’র স্বামী এক বন্ধুর মাধ্যমে পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করি, তারা জানান যে পু’লিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট আসেনি।”
এরপর সরকারী কয়েকটি অফিস ঘুরে আরো প্রায় দেড় মাস পরে পাসপোর্ট হাতে পেয়েছিলেন আজমী।সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধরণের অ’ভিযোগ হরহামেশা শোনা যায়।এমনকি ২০১৬ সালে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য একজন বিচারপতির বাসায় গিয়ে ঘুষ দাবি করার পর পু’লিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন এএসআই এর বি’রুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেছিলেন সেই বিচারপতি।
এ বছরের মা’র্চে পরে ঐ এএসআইকে আ’দালত এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে।এই ঘটনা নিয়ে সেসময় ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল।

পু’লিশ ভেরিফিকেশন কী?
আবেদন পত্র হাতে পেয়ে প্রাথমিক কাজ শেষ করে পাসপোর্ট অফিস আবেদনকারীর তথ্য যাচাইয়ের জন্য পাঠায় পু’লিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ বা এসবি কার্যালয়ে।। জে’লা পর্যায়ে হলে সেটা যায় পু’লিশ সুপারের কার্যালয়ে।
সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট থানার একজন উপ-সহকারী পরিদর্শক বা এএসআই, সহকারী পরিদর্শক বা সাব ইন্সপেক্টর কিংবা ইন্সপেক্টরকে তথ্য যাচাইয়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরপর ঐ কর্মকর্তা তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে পাসপোর্ট অফিসে যে প্রতিবেদন পাঠান – সেটাই ‘পু’লিশ ভেরিফিকেশন’ নামে পরিচিত।
কতটা জরুরী পু’লিশ ভেরিফিকেশন?
বর্তমানে প্রচলিত ব্যবস্থা অনুযায়ী প্রথমে ব্যাংকে ফি জমা দিয়ে, একজন আবেদনকারী পাসপোর্ট ফর্ম পূরণ করেন। এক্ষেত্রে সাধারণ অর্থাৎ এক মাস সময়ের মধ্যে, জরুরী অর্থাৎ সাত দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পাবার ব্যবস্থা রয়েছে।-সূত্রঃ-বিবিসি