রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল -|- ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
hridoyechattogram.com - news@hridoyechattogram.com - www.facebook.com/hridoyechattogram/

বাঙ্গালীরা বঙ্গবন্ধুকে কতটুকু মূল্যায়ন করতে পেরেছে?

প্রকাশিত হয়েছে- রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৯

সাফাত বিন ছানাউল্লাহ্

ভাগ্যিস বসন্ত ছিল! না হয় অনেকে একটা ঋতুর নামও মনে রাখতো না। ভাগ্যিস বৈশাখ আর ফাল্গুন ছিল! না হয় মানুষ একটা বাংলা মাসেরও নাম মনে রাখতো না।
ভাগ্যিস মাসগুলো ছিল!! না হয় তো আমরা ভুলেই যেতাম যে, ‘আমরাও বাঙালি’।
হ্যা, আমরা সারা বিশ্বের বুকে গর্বিত বাঙ্গালী। আমাদের ভাষা “বাংলা”। সারাদিনের ক্লান্ত দেহ নিয়ে যখন “মা” শব্দটি একবার বাংলায় বলি তখন মনে হয় সমগ্র দুনিয়াজোড়া সুখ আমার। যেখানে বিশ্বের অনন্য দেশে পাখির কুজন নিচক এক কাহিনী হিসেবে কল্পিত হয় সেখানে আমার বাংলাদেশের চিরসবুজ গ্রামবাংলায় হরেক পাখির কোলাহলেই সবার ঘুম ভাঙ্গে।
তবুও বাঙ্গালী হিসাবে আমরা আজও পিছিয়ে। আমরা এখনো দিতে পারিনি আমাদের ভাষার সত্যিই কারের মান মর্যাদা। স্বাধীনতার মুল চেতনাই বা কয়জনের আছে! যারা দেশকে ভালবেসে অস্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করেছিল ওরা আজ কতটুকু সম্মানিত? বীরাঙ্গনা মা, বোন, মেয়েরা কী ভাল আছে? এই প্রশ্নগুলো প্রতিনিয়ত আমায় তারা করে ফেরে। আজও অজপাড়ার মেয়েরা পায়নি তাদের অধিকার। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে শিক্ষা থেকে। যুবক, কিশোরদের কী অবস্থা?
ওরা আজও অপরাধ জগতের অধিবাসী। কিন্তু, আমরা বাঙ্গালী। আমাদের আছে লক্ষ বছরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য। আমরা কী বাংলাদেশি এটা ভুলে গেছি?
১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটারের ছোট্ট এই ভূখণ্ডের স্থপতি যিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গর্ব করে বলতেন – “জয় বাংলা, আমি বাঙালী”। কখনও তিনি “জয় বাংলাদেশ, আমি বাংলাদেশী বলেননি। বঙ্গবন্ধু সারা পৃথিবীর সকল বাংলাভাষীদের অভিন্ন হৃদয়ে গেঁথেছিলেন। তাঁর রাজনীতি আত্মত্যাগ সবই ছিল বাঙালীর জন্য। এজন্যই তিনি সারা বিশ্বের সবার শ্রদ্ধার পাত্র হতে পেরেছিলেন।
কোথায় বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি! কোথায় আওয়ামী লীগের। মাটি আর আকাশ তফাৎ। তবুও বর্তমান নব্য আওয়ামী লীগার ও নেতা-কর্মী দাবিদারেরা নিজেদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শী বলে মিথ্যে প্রচারণায় ব্যস্ত।
আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে উনিশ শতকের এই পর্যন্ত ওরা জানেও না দলের সমৃদ্ধ ইতিহাস, প্রাচীনকাল থেকে কারা ছিলেন নিঃসার্থ ত্যাগ আর ভালবাসা দিয়ে দলকে আগলে রাখার ভূমিকায়, এমনকি বঙ্গবন্ধুর দেশকে নিয়ে কি ভাবনা ছিল সত্যিকারের প্রকৃত সোনার বাংলা গড়তে তা নিয়েও একেবারে অজ্ঞ। যদিও ওদের প্রেমের বাহুডোরে বাঁধতে চায় বিশাল হৃদয় মনের বঙ্গবন্ধুকে। যারা নৌকাকে মনে-প্রাণে ভালবাসে ওরা আজকাল নিজেদের বাকশালী বললে শাড়ীর আচলে মুখ লুকান কেন? তাদের এত লজ্জা কিসের?
বাকশাল, বাকশালী শব্দগুলো শুনতে শুনতে সেই ছোটবেলা থেকে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর সেই বাকশাল কায়েম করার সময় যারা ছিলেন ওদের বেশিরভাগ মৃত্যুবরণ করেছেন, যারা জীবিত আছেন ওরাও নিরব ভূমিকায়। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু যে ভাষন দিয়েছিলেন বাকশাল গঠনের পরে সেই দুর্লভ ভিডিও চিত্র ইন্টারনেট থেকে নিয়ে কিঞ্চিত বুঝতে পারি কিছুটা।

একটা সামান্য উদাহরন দিতে চাই বাকশাল নিয়ে। জানি অনেক নাদান মূর্খ আমার সমালোচনা করবে। আমাদের পবিত্র ইসলাম ধর্ম যখন প্রিয় নবী (দ.) এর চার খলিফার অন্যতম হযরত ওসমান গণি জিন্নুরাইন (রাদ্বিঃ) র আমলে বিভিন্ন দলাদলিতে বিভক্ত হয়ে পরেছিল তখন জামেউল কোরআন হযরত ওসমান (রাদ্বিঃ) সারা দেশে যাদের কাছে পবিত্র কোরআন সংরক্ষিত ছিল সবগুলো একত্র করে তখনকার শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি বোর্ড গঠন করে শুধুমাত্র ছয়খানা বিশুদ্ধ খণ্ড রেখে বাকিগুলো ধংস করে দিয়েছিল। তারপর হযরত ওসমান (রাদ্বিঃ)র আদেশকে সবাই মেনে নিয়ে ইসলামে আবার শান্তির বাতাস বইতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত লওহে মাহফুজের মহান আল্লাহর বাণী যেটি আমাদের প্রিয় নবী (দ.) এর উপর নাযিল করা সেই পবিত্র কোরআন শরীফই আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। পরবর্তীতে ইসলামে বাতিল দল হিসেবে চিহ্নিত খারেজী সম্প্রদায় হযরত উসমান (রাদ্বিঃ) কে পবিত্র মসজিদে শহীদ করে ফেলে। ওনাকে শহীদ করার কারণগুলোর মধ্যে পবিত্র কোরআন ধংস করা টাও অন্যতম ছিল।
বঙ্গবন্ধুর মধ্যেও হয়তো হযরত ওসমান (রাদ্বিঃ)র সেই আদর্শ ছিল। থাকার কথাও! ওনার পূর্বপুরুষরাতো ইসলাম প্রচার করার জন্যই এই দেশে এসেছিলেন। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর পরিবারবর্গ অত্যন্ত ধর্মভীরু, তিনি নিজেও ছিলেন ধর্মানুরাগী। বিশাল হৃদয়ের মানুষটি নিজ ধর্মের অনুরাগী হয়েও অন্য ধর্ম বা ধর্মাবলম্বীদের প্রতি ছিলেন সমান শ্রদ্ধাশীল। তিনি বারবার বলেছেন- “এই দেশ সবার, সবাই ভাই ভাই “।
বিষয়টা নিয়ে আজো প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে ছোট ছোট যুদ্ধ চলে। পবিত্র ধর্মকে পুঁজি করে একদল রমরমা ব্যবসায় ব্যস্ত আর অন্যদল রক্তগঙ্গা বইয়ে ধর্ম প্রচার করতে চায়। জাতীর পিতা এমন বাংলাদেশ কখনও চাননি। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ বিজয়ের ৪৭ বছর পরেও মানুষের রক্তের হোলিখেলা আমাদের দেখতে হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ যখন ধীরে ধীরে উন্নত বিশ্বের কাতারে চলে যাচ্ছিল তখন হটাৎ দেশে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং একটা সময় চরম দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। তখনকার প্রধানমন্ত্রী জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন সবাইকে এক করে সত্যিকারের একটি সোনার বাংলাদেশ গড়তে। বঙ্গবন্ধু যদি সেই সময় সবাইকে এক করতে পারতেন তাহলে বাংলাদেশে আজ যেগুলো আমরা অজপাড়া গাঁ বলি সেগুলো আজ সিঙ্গাপুরের চাইতেও উন্নত শহর হতো। বাংলাদেশ অনেক আগেই পরিচিত পেত বিশ্বের বুকে একটা মর্যাদাপূর্ণ দেশ হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর মত উদার বিশ্বখ্যাত দেশপ্রেমিকের মধ্যে সেই ক্ষমতা ছিল।
বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা নিছক একটা দেশ দখল করা ছিলনা, ঘাতক-পাষণ্ডদের মহাপরিকল্পনা সেইদিন ফলপ্রসূ হয়েছিল ঠিক তাও ক্ষণিকের জন্য। খুনিদের ইতিহাসের সেই নির্মম বর্বরোচিত গণহত্যার পর বঙ্গবন্ধুর যে বীরোচিত সম্মান ছিল আমরা আজ তা প্রতি পদক্ষেপে ক্ষুন্ন করছি। আজও আমরা পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ ৭ ই মার্চ নিয়ে প্রশ্ন তুলি! অনেকে মানতে চাইনা বাঙ্গালীর মুক্তির সেই কাঙ্ক্ষিত ঘোষণা ছিল মহান দিনটি।
আমার মত বঙ্গবন্ধু প্রেমিকদের মনে একটাই প্রশ্ন জাগতে পারে- এত লজ্জা পেলে তো বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বিক্রি করতেই হবে। আজ তারা করছেনও!
দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন জনপ্রিয় দলটিকে আজ তারা খণ্ড খণ্ড করতে ব্যস্ত। স্বাধীনতা বিরোধীদের অর্থলোভী হয়ে দলে ভিড়িয়ে পদের মালিক করছে আর ওপারে থাকা বঙ্গবন্ধুর হৃদয়কে বারেবারে ক্ষতবিক্ষত করছে ওরা। প্রকৃত আওয়ামী পন্থীরা আজ বড়ই অসহায়, এই দুর্দিনে তাদের পাশে দাড়ানোর মত কেউ নেই। আসুন সবাই ওদের সম্মান ফিরিয়ে দিই।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি যদি সামান্য পরিমাণ শ্রদ্ধাবোধ থাকে আসুন আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা সহায়সম্বলহীন মুক্তিযোদ্ধাদের ভালভাবে স্বাধীন মুক্ত বাতাসে বাঁচার নিশ্চয়তা দিই। দেশরক্ষার সৈনিকদের অধিকার তাদের ফিরিয়ে দিই। আজও ওরা এই দেশে বিনাচিকিৎসায় মারা যায় এক পাহাড় সমান কষ্ট নিয়ে। বিষয়টা আমাদের জন্য খুবই লজ্জার, অনুশোচনার। ওদের কী এমন জীবন প্রাপ্য ছিল?
কোনমতেই না কস্মিনকালে ও না। বীরযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের জন্যই তো আমি স্বাধীনভাবে লিখতে পারছি। জাতীর পিতার যোগ্য কন্য কাজটি পারবেন বলে আমার বিশ্বাষ।

সাফাত বিন ছানাউল্লাহ্
কবি, ছড়াকার ও প্রাবন্ধিক
সাতবাড়িয়া, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম
সদস্য : চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র (সিএইসআরসি)
মোবাইল : 01845234492

বাঙ্গালীরা স
কবি, ছড়াকার ও প্রাবন্ধিক
সাতবাড়িয়া, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম
সদস্য : চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র (সিএইসআরসি)
মোবাইল : 01845234492