রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল -|- ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
hridoyechattogram.com - news@hridoyechattogram.com - www.facebook.com/hridoyechattogram/

চামড়ার ক্রেতা মিলছে না চন্দনাইশে গ্রামাঞ্চলে, সিন্ডিকেটের বাইরে চামড়ার ক্রেতা নেই!

প্রকাশিত হয়েছে- সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০১৯

মো.নুরুল আলম,বিশেষ প্রতিনিধিঃ

এবার ঈদে কোরবানি করা পশুর চামড়া কেনার ক্রেতা কম চন্দনাইশে। ইতোমধ্যে পশুর গোসত বানানো প্রায় শেষ হয়ে গেলেও চামড়া কেনার ক্রেতা নেই জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামাঞ্চলে।

সোমবার (১২ অাগষ্ট) দুপুরে পৌনে ৩টার দিকে দেশ রূপান্তরকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একাধিক ব্যক্তি।

চামড়ার চাহিদা না থাকায় এবার চট্টগ্রামে চন্দনাইশ উপজেলায় বিক্রেতারা ছুটছেন ক্রেতার খোঁজে। অন্যান্য বছর ক্রেতারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া কেনেন। কিন্তু এবার চিত্র উল্টো। ক্রেতাদের চাহিদা না থাকায় নামমাত্র দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রেতারা।

অন্যান্য বছর বিভিন্ন গ্রাম থেকে কোরবানির পশুর চামড়া এক জায়গায় জড়ো করে বিক্রি হতো। ক্রেতারা সেসব জায়গায় এসে চামড়া কিনে নিয়ে যেতেন। তবে এ বছর কোনো ক্রেতার দেখা মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর ও আজ মঙ্গলবার সকালে বিক্রেতারা চামড়া নিয়ে ক্রেতাদের সন্ধানে ছুটেছেন।

আজ সোমবার সকালে উপজেলার বড়পাড়া (কসাই পাড়া) চামড়া বিক্রির দুটি অস্থায়ী হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রেতারা কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে এসে বিক্রি করছেন। প্রতিটি গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭০ থেকে ২০০ টাকায় এবং ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়।

উপজেলার দোহাজারী পৌরসভা এলাকার মাসুদুর রহমান জানান, প্রায় প্রতিবছরই পারিবারিকভাবে আমরা কোরবানি দিয়ে থাকি। গত দুই/তিন বছর ধরে কোরবানি দেওয়া পশুর চামড়ার দাম আগের তুলনায় কম। তবে, এবার ঈদে চামড়া কেনার ক্রেতা নেই বললেই চলে।

দক্ষিণ গাছবাড়িয়া গ্রামের আবদুর রহিম জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা চামড়া বাড়িতে বসেই বিক্রি করতেন। মৌসুমি ও পেশাদার চামড়া ক্রেতারা এসে বাড়ি থেকে চামড়া কিনে নিয়ে যেতেন। তবে এবার ক্রেতারা না আসায় কসাই পাড়া আড়তে গিয়ে চামড়া বিক্রি করেছেন। সেখানে দামও ভালো পাননি। বহন খরচ বাদে সামান্য টাকা পেয়েছেন।

উপজেলার বরকল ইউনিয়নের এলাকার প্রতিবেশী বোরহান উদ্দিন জানান, ‘৬৫ হাজার টাকা দিয়ে এবার তার এক প্রতিবেশী ষাঁড় গরু কোরবানি দিয়েছেন। তার কোরবানি দেওয়া পশুটির চামড়া স্থানীয় এক মাদ্রাসার ছাত্রদের কাছে দুইশ’ টাকা বিক্রি করেছেন।

আবদুর রশিদ নামের আরেক চামড়া বিক্রেতা জানান, তিনিও কম দামে চামড়া বিক্রি করেছেন। এখানে বর্গফুট হিসাবে চামড়া না কিনে ক্রেতারা প্রতি পিছ হিসেবে চামড়া কিনেছেন।

বিক্রেতাদের অভিযোগ, এবার চামড়া ক্রেতারা সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। তাঁরা এবার চামড়া কিনতে মাঠে না নেমে উপজেলার দ/তিনটি জায়গায় বসে চামড়া কিনেছেন। তারা নিজেরাই দাম নির্ধারণ করে সবাই কম দামে চামড়া কিনেছেন। এ ছাড়া এবারও আগে থেকেই চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তা প্রচার হওয়ায় মৌসুমি ক্রেতারা ভয়ে চামড়া কিনতে মাঠে নামেনি।

শামসুল আলম নামের একজন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, চামড়ার দাম কম নির্ধারণ করে দেওয়ায় এবার তিনি কেনেননি। তাঁর মতো আরও অনেকেই এবার এই ব্যবসা থেকে দূরে থেকেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিরু কসাই নামে এক চামড়া ব্যবসায়ী জানান, কয়েক বছর ধরে চামড়া কিনে পরে তা বিক্রি করতে গিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাই এবার ঈদে খুব চিন্তা ভাবনা এবং যাচাই বাছাই করে চামড়া কিনছেন তিনি।এছাড়া গরু জবাই করার সময় অনেকেই চামড়া কেটে ফেলেন, তাই সেগুলো কোনো কোনো কাজে আসে না।

কসাই জহিরুল ইসলাম,নূর মোহাম্মদসহ সাতজন চামড়া ব্যবসায়ী এবার নির্দিষ্ট স্থানে বসে চামড়া কেনার কথা স্বীকার করে জানান, লবণের দাম বৃদ্ধি ও পরিবহন খরচসহ বিভিন্ন কারণে এবার কম দামে চামড়া কেনা হয়েছে। তবে এতেও তাঁদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তাঁরা।