রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল -|- ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
hridoyechattogram.com - news@hridoyechattogram.com - www.facebook.com/hridoyechattogram/

শহীদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী (রাহঃ) ইসলাম বিকৃতকারীদের কালো থাবায় শহীদ একজন সাচ্চা আলেমেদ্বীন

প্রকাশিত হয়েছে- সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৯

সাফাত বিন ছানাউল্লাহ্

আগষ্ট শোকের মাস, বেদনার মাস, বাঙালীর অনেককিছু হারানোর মাস। এই অপয়া মাসটা আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে সর্বস্ব। প্রতি বছর আগষ্ট আসলেই শুন্যতার অনুভূতি জাগে মনে-প্রাণে।

একটা প্রবন্ধ লিখব। তার জন্য কত অপেক্ষা, কত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। প্রবন্ধটি যখন লিখতে বসলাম মনের অজান্তে দু চোখের অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পরছে! অনেক সময় ছিল, অাসলে শহীদে মিল্লাত আল্লামা শাইখ নুরুল ইসলাম ফারুকী (রাহঃ) নিয়ে কোন কিছু লিখতে বা বলতেই পারিনা কোন এক অজানা আকর্ষনে।

আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগের কথা, ২০১৪র ২৭শে আগষ্টের সকাল। আমার মরহুম বাবা যেহেতু পিডিবি (ওয়াপদা) তে চাকরী করতেন সেহেত এখনো ওই অফিস বা অফিসের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। ওই দিন চট্রগ্রামের আগ্রাবাদ (মনছুরাবাদ) অফিসে বিদ্যুৎ- শ্রমিক লীগের একটা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত প্রায় ৮.০০ টা বেজে যায় । আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাবার এক কলিকের বাসায় উটি। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যাই রাত প্রায় ১০.০০ টায়। হটাৎ মোবাইলে রবি সার্কেলের মেসেজ বেজে উটে আমাদের পাশের গ্রাম (যতরকুলের) সুন্নীয়তের একনিষ্ট কর্মী, বন্দুবর জামেয়া আহমদিয়ার ছাত্র বোরহান ভাইয়ের ” আল্লামা ফারুকীর রক্ত বৃথা যেতে দেবনা, যে যেখানেই আছো প্রতিরোধ গড়ে তোল” সময়ের অাকস্মিকতায় হটাৎ এটা কি পরছি কিছুই বুঝতে পারিনি। ঘুম থেকে উটে বোরহান ভাইকে ফোন করলাম, ভাই কি হয়েছে??? বোরহান বলল, তোমরা তোমাদের এলাকায় প্রতিবাদ কর, আমি বললাম কি হল? তারপর যা শুনলাম!

তুমি কি জাননা ঢাকায় আল্লামা ফারুকী হুজুরকে খুন করা হয়েছে। শুধু এইটুকুই শুনে আমার গা,হাত সব কাপছিল আর পাগলের মত কাঁদছিলাম। আমার বাবার বন্দুটি ঘুম থেকে উটে আমায় জিগ্যেস করে কি হয়েছে। আমি কোন কথার উত্তর না দিয়ে সোজা দৌড়ে চলে গেলাম সামনে টিভির রুমে, টিভি অন করতেই প্রত্যেকটা চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজ একটাই। সেদিন আমার পাগলের মত চিৎকার করে কান্নায় বাসার সবাই ঘাবড়ে গিয়েছিল। এরপর কিছুটা শান্ত হয়ে মোবাইল খুজে নিয়ে বিভিন্ন জনকে ফোন করি, সবার কন্ঠে ছিল কান্নার ছাপ। ওই বাসায় একটা ১৩ বছরের ছেলে ও ঘুম থেকে উটে যায় আর বলে বাবা রমজানে যে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ইসলামের ইতিহাস টিভিতে দেখাতেন ওই ফারুকী হুজুর না?
পরের দিন ছোট,বড় আবাল বৃদ্ধ সকলের মুখে একটাই কথা বাংলার জমিনে এমন নরপিশাচ কে যারা একজন বিশ্বখ্যাত আলেমেদ্বীনকে রাতের আঁধারে জবাই করতে পারে? কখনও কল্পনাও করতে পারিনি আমার প্রিয় মানুষটিতে এভাবে হারাতে হবে।

২৭ শে আগষ্ট পবিত্র ধর্ম ইসলাম তথা সঠিক দ্বীন সুন্নীয়তের অঙ্গনে এক বেদনাবিধুর শোকাবহ দিন। ২০১৪ সালের ভয়াল ওই রাতে ইসলামের নামধারী, ধর্ম বিকৃতকারী, খোদাদ্রোহী, নবীদ্রোহী, অলিদ্রোহীদের কালো থাবায় নৃশংসভাবে শাহাদাত বরণ করেন – দেশের শ্রেষ্ঠ একজন আলেমেদ্বীন, যিনি এই সোনার বাংলাদেশ পেড়িয়ে জনপ্রিয় হয়ে উটেছিলেন বহির্বিশ্বে। আন্তর্যাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেমেদ্বীন, দেশবরেণ্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, অনুকরণীয় বক্তা ও ওয়ায়েজীন হযরতুলহাজ্ব আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী (রাহঃ)। আল্লামা ফারুকী এই দেশেই সীমাবদ্ধ থাকেননি নন্দিত ছিলেন বিশ্বব্যাপী। দেশের প্রধানতম বেসরকারি টিভি চ্যানেল ” চ্যানেল আই ” এর স্রোতাপ্রিয় শান্তির পথে ও কাফেলা অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, এছাড়া তিনি দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিমকোর্ট জামে মসজিদের সম্মানিত খতিব ছিলেন। যার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বি।

১৯৯৭ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে একমাত্র সরকারী চ্যানেল ” বিটিভি ” তে ” ধর্ম ও জীবন ” অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি মিডিয়া জগতে কাজ শুরু করেন। ২০০১ সালে পরিবর্তিত সরকার জামায়াত ও জঙ্গিদের মদদে অত্যন্ত সুকৌশলে তাঁকে বিটিভি থেকে বের করে দেয়। মিডিয়াতে তিনি বাতীল ওয়াহাবি, জামায়াতি, শিয়া সহ ইসলামের খোলস ধারণকারীদের প্রতি ছিলেন সোচ্চার ভূমিকায়। ছিলেন – মিষ্টভাষী, বিনয়ী, নম্র একজন সাচ্চা আশেকে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। যে কেউ হুজুরের সংস্পর্শে এলে মুগ্ধ হয়ে ভক্ত হয়ে যেত। তাঁর উপস্থাপনায় চ্যানেল আই’ তে কাফেলা অনুষ্ঠান দেখার জন্য পবিত্র রমজান মাসে
দেশী-বিদেশের লক্ষ-কোটি দর্শক টিভির সামনে অপেক্ষমাণ থাকত। এই কাফেলা অনুষ্ঠানে ওনি বিশ্বের প্রায় ১৫ টি দেশ ঘুরে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ, দুর্লভ, ঐতিহাসিক তথ্যচিত্র সরেজমিনে তুলে ধরতেন অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে। যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বের প্রায় ১৯৫ টি দেশের মুসলমানরা দেখতে পেত। অন্য ধর্মাবলম্বীরা পর্যন্ত এই নিদর্শন দেখে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিতেন। বাতীল পথভ্রষ্টদের তিনি সরাসরি বাহাছ (তর্ক) র দাওয়াত দিতেন। নম্র ভাষায় বারবার বলেছেন -‘ মানুষ হত্যা করে, মিথ্যাচার করে ধর্ম প্রচার করা যায়না। আমাদের সাথে তোমাদের যে বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘদিন মতপার্থক্য আসুন বসে আলোচনা করি। যেটা সত্য অবশ্যই মেনে নিব। সংঘাত হানাহানি তো ধর্মের বিপক্ষে ‘। প্রতিটি অনুষ্ঠান-মাহফিলে এমন নরম সুরে কথা বলতেন, কোনদিন আক্রমনাত্বক কথা বলেননি ফারুকী হুজুর (রাহঃ)। ইসলামের শাশ্বত বাণী জনসম্মুখে তুলে ধরতেন সুনিপুণ ভাবে। বাতীল উগ্রবাদীরা কোনদিন তাঁর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেনি, উল্টো হুমকি দিয়ে গেছে বারবার। শতবার হত্যার হুমকি ও প্রাণনাশের শঙ্কা থাকা সত্তেও নবী-অলির শান গেয়েছেন শাহাদাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। প্রতিটি কথায় প্রতিটি বাক্যে যেন সুন্নাতের বাস্তব অনুসরণ।

সেজন্যই মিডিয়া জগতের প্রিয় পাত্র ছিলেন তিনি। জঙ্গিরা ছাড়া সবাই ওনাকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন। চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও আন্তর্যাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কৃষি গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজকে সর্বপ্রথম হজ্ব করান তিনি।

চ্যানেল আই ছাড়াও তিনি দেশের অন্যতম বেসরকারি চ্যানেল ” মাই টিভি ” তে হক্ব কথা নামে জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন। নিখুঁত, উপস্থাপনা, অদ্ভুত বাচনভঙ্গি, সাবলীল আলোচনা, প্রাঞ্জল ভাষায় ছিলেন সকলের অনুকরণীয়। বহুগুণে গুণান্বিত একজন মহাপুরুষ ছিলেন আল্লামা ফারুকী (রাহঃ)। মূলত ওনার সাথে পেরে উটতে না পেরে নবীদ্রোহীরা ঈর্ষা করত আর কিভাবে তাঁকে পরাস্ত করা যায় সেই স্বরযন্ত্র করেছে দিনের পর দিন। হুজুরের জবানে বারংবার উচ্চারিত ছিল – শাহাদাতের কথা। মাহফিল গুলো দেখলে প্রমাণ পাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত নিজের প্রিয় জীবনকে অকাতরে কোরবান করতে ও পিছপা হননি ইসলামের সঠিক পথ ও মত সুন্নীয়তের মান বাঁচাতে। যুগে যুগে তো এমনটাই হয়ে এসেছে। মিথ্যার বিপক্ষে লড়াই করতে গিয়ে সত্যবাদীদের শাহাদাত বরণ করতে হয়েছে। তাইতো শাহাদাতের পর হুজুরের হাসিমাখা মুখটি উত্তম শহীদের পরিচয় দেয়। বিভিন্ন মাহফিল-টিভি অনুষ্ঠানে হুজুর প্রায়ই বলতেন – ” আমাকে এ পর্যন্ত অনেকবার প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে কিন্তু, আমি ভয় পাইনা। যার ভেতর প্রিয় রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ভালবাসা নাই সে যদি পৃথিবীর ৭০০ কোটি জনসংখ্যার শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ব্যক্তি হয়ে থাকে তাকে আমি আমার জুতার সুকতলা মনে করি। রাস্তার মুছি, কামার সুইপারের ভেতর যদি নবীপ্রেম থাকে আমার মাথার তাজ মনে করি “। প্রকৃত আশেকে রাসুলের এমন দৃষ্টান্ত সত্যিই অতুলনীয়।

আমি ছিলাম কাফেলা এবং হুজুরের অন্ধভক্ত । পবিত্র মক্কা-মদীনার সচিত্র প্রতিবেদন , বিশ্বের প্রায় দেশের ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, নবী-রাসুল (আ.), সাহাবায়ে কেরামের (রাদ্বিঃ), আওলিয়ায়ে কেরামের (রাহঃ) মাজারের ইতিহাস ও জীবনী অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে তিনি তুলে ধরতেন কাফেলায়। অধীর আগ্রহ নিয়ে টিভি সেটের সামনে বসতাম মনযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। আজও প্রতি বছর আসে রমজান, থাকে সাহরি-ইফতার, আছে টিভি সেট- শান্তির পথে-কাফেলা।

কিন্তু, হায় আল্লাহ ২০১৪ সালের সেই কালরাত্রিতে কি ঘটল! বাংলার কিছু কুলাঙ্গার, ধর্মশত্রু, সঠিক ইসলামের বিরোধীদের চক্রান্তে প্রিয় ব্যক্তিত্বের মর্মান্তিক শাহাদাতে সেইদিন শুধু শোকস্তব্দ হইনি বাকরূদ্ধ ছিলাম পরের বেশকয়েকদিন। সেই শোক আজও শেষ হয়নি, শেষ হওয়ার কথাও নয়।

ওনাকে যেদিন নির্মমভাবে শহীদ করা হয় আচমকা মধ্যরাতে বৃষ্টি হতে থাকে। ২৭ আগষ্টের আগে অনেকদিন যাবৎ বৃষ্টি হচ্ছিলনা। এ যেন আসমান-জমিন জমিন কাঁদছিল ফারুকী হারানোর ব্যাথায়! একজন শিশু থেকে বৃদ্ধকে পর্যন্ত শোকের মাতম করতে দেখেছি।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনামতে – এশার নামাজের প্রস্তুতি নেয়ার সময় অজ্ঞাত দুজন বাসায় ঢুকে হুজুরের সাথে আলাপের কথা বলে। তখন হুজুর বাসায় ছিলেননা। প্রায় আধঘণ্টা পর তিনি বাসায় ফেরেন। সোফায় বসে ওদের সাথে কথাবার্তার এক পর্যায়ে ওই দুজন বলেন – মিডিয়াতে কাজ করে তো অনেক টাকা কামিয়েছেন, হজ্ব ব্যবসা করেও ভালো টাকা বানিয়েছেন। আমাদের ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে দেন। ইতিমধ্যে আরো ৫-৬ জন মুখোশধারী যুবক বাসায় ঢুকে। মুহূর্তেই ঘাতকচক্র আল্লামা ফারুকীকে নিয়ে একটি কক্ষে আটকে দেয়। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আলাদা কক্ষে আটকে ফেলে। মাওলানা ফারুকী মিনতি করে বলেছিলেন – এত টাকা আমি কোথায় পাব? আজ যা আছে নিয়ে নাও, আগামীকাল ব্যাংক থেকে উটিয়ে যা আছে সব দিয়ে দিব। ঘাতক নরপশুরা কোন কথা শুনলনা, ওদের টার্গেট তো টাকা নয়। পশুরা এসেছিল আল্লামা ফারুকীর কণ্ঠরোধ করতে। যে গলা দিয়ে তিনি নবী-অলি, সঠিক ইসলাম ধর্মের মর্মবাণী বয়ান করতেন, বজ্রকন্ঠে বক্তব্যের মাধ্যমে বিশ্বের সুন্নী মুসলিম জনতাকে উজ্জীবিত করতেন, তেজোদৃপ্ত সাহসিকতা আর দলিল দিয়ে ওয়াহাবি, জামায়াতিদের হৃদকম্পন সৃষ্টি করে দিতেন সে গলাই তাদের টার্গেট। টাকা দাবী তো বাহানা মাত্র। এরপর, পাষণ্ডরা আল্লামা ফারুকীর চোখ,হাত,পা বেঁধে নিষ্ঠুর এজিদি কায়দায় গলায় ছুরি চালিয়ে শহীদ করে দ্রুত চলে যায়।

বর্বর সীমারের বংশধরা পিছন থেকে হামলা করে হোসাইনি কাফেলার মুসাফিরদের হত্যা করে ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। ওরা এখন ও বিশ্বময় ছড়িয়ে আছে সত্যকে চিরতরে নিঃশেষ করার জন্য। মিডিয়া ও ওয়াজের ময়দানে মানুষ যখন দিনদিন হেদায়াতের আলো দেখছিল ঠিক তখনই দেশবিরোধী, ধর্মবিরোধীরা এক হয়ে আল্লামা ফারুকীকে শহীদ করিয়েছেন। এ বিষয়ে একটি গোপন বৈঠকের কথা জানা যায়।

বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় ২১ আগষ্ট ২০১৪, অর্থাৎ ঘটনার মাত্র ৬ দিন আগে। ২১ আগষ্ট রাজধানীর কাওরানবাজার ট্রেড সেন্টারে ইসলামী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠান উপস্থাপকদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের প্রায় সব টিভি চ্যানেলের ধর্ম ভিত্তিক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও আলোচকরা অংশগ্রহণ করেন। উপস্থিতির সংখ্যা ছিল ২২। আলোচনা চলাকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক শহীদুল্লাহ প্রস্তাব করেন – টিভিতে যারা ইসলামী অনুষ্ঠান করেন সবাইকে নিয়ে একটি সংগঠন করার করতে হবে। মুফতি ইব্রাহিম ও ফারুকী সাহেব একে অপরের বিরুদ্ধে যেভাবে কথা বলেন সংগঠন করলে হয়তো আমরা ওনাদের এক জায়গায় আনতে পারব। এসময় এটিএন ও এনটিভির উপস্থাপক কুখ্যাত তারেক মনোয়ার বাঁধা দিয়ে বলেন – ফারুকীর পক্ষে দালালী কর? এখানে ফারুকীর শেরেকী বেদাতি চলবেনা। তাকে প্রতিহত করার জন্য সবাই একত্রিত থাকলে ফারুকীকে মেরে ফেলা যাবে। এসব বাদ দিয়ে কিভাবে কমিটি করা যায় কর। তারেক মনোয়ারের প্রস্তাবকে এটিএন বাংলার পরিচালক আরকান উল্লাহ হারুনি, রেডিও টুডে, আরটিভির খালেদ সাইফুল্লাহ বখশী, এনটিভির পিএইচপি কোরআনের আলোর মোক্তার আহমদ, এস এ টিভির মোস্তাফিজুর রহমান, কারবালার পথে অনুষ্ঠানের কেফায়েত উল্লাহ ও এটিএন বাংলার আবুল কালাম আজাদ তাঁকে সমর্থন করেন। ঐ সভায় মাওলানা ফারুকীকে বাদ দিয়ে জামায়াতি কামাল উদ্দিন জাফরীকে প্রধান উপদেষ্টা আরকান উল্লাহ হারুনি ও খালেদ সাইফুল্লাহ বখশীকে সদস্য সচিব করে ৩৪ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। মাওলানা ফারুককে কার্যনির্বাহ কমিটিকে রাখার প্রস্তাব উটলেও শেষ পর্যন্ত রাখা হয়নি। ২৮ শে আগষ্ট গঠিত কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করার কথা কামাল জাফরী হজ্বে যাওয়ায় স্থগিত করা হয়। এ সভা থেকে খুব সহজেই অনুমান করা যায় আল্লামা ফারুকীকে কারা শহীদ করেছে!

ওই নৃশংস ঘটনার পর বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসাইন তুষার বাদী হয়ে তারেক মনোয়ার সহ ৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এর কিছুদিন পর পিস টিভির আলোচক মোজাফফর বিন মহসিনকে গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য – মহসিন একটি চ্যানেলে মাওলানা ফারুকীকে সরাসরি হত্যার হুমকি দিয়েছিল। কিছুদিন পর অজ্ঞাত কারণে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এত বছর হলেও একজন আসামীকেও আইননশৃঙলা বাহিনী গ্রেফতার করেনি। আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও তাদের জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড গুলো চালিয়ে যাচ্ছে। ফারুকী হত্যাকাণ্ডে নিশ্চয় বড় কোন সন্ত্রাসী দল জড়িত আছে যারা বেড়ে উঠছে উপর মহলের ছত্রছায়ায়। ঐ দিন আর দুরে নয় সত্য উৎঘাঠন হবেই, নরপশুদের বিচার এই বাংলার মাটিতে সবাই দেখবে ইনশাআল্লাহ। পরিশেষে –

এখনো প্রান কাঁদে
সেই দিনের কথা ভাবলে
লুকিয়ে তখন দু চোখ মুছি
মানুষের আড়ালে।
আকাশ,বাতাস খুছে বেড়ায়
কোথায় হারালে তুমি,
তোমার বিরহে কাঁদে এখনো
সোনার জন্মভুমি ।।