রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল -|- ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
hridoyechattogram.com - news@hridoyechattogram.com - www.facebook.com/hridoyechattogram/

চন্দনাইশে তথ্য আপা প্রকল্পের তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন বিষয়ে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৯

মো. নুরুল আলম, চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :

বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। আর তাই, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন দেশের সার্বিক অগ্রগতির অন্যতম শর্ত। নারীর ক্ষমতায়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

চট্টগ্রামে চন্দনাইশ উপজেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে তথ্যের সম্ভার নিয়ে আসা তথ্য আপার উঠান বৈঠক।গ্রামের অসহায়, দরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত কিংবা কম সুবিধাবঞ্চিত নারীর তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং তাদেরকে তথ্য প্রযুক্তির সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার অধীনে বাস্তবায়নাধীন তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় এবং উপজেলা তথ্যকেন্দ্রের আয়োজনে এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মহিলাদের বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতামূলক এ উঠান বৈঠক অনুষ্ঠান হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের ধুগর্ম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত ত্রিপুরা পাড়া গ্রামে উপজেলা তথ্যসেবা কর্মকর্তা শাপলা খাতুন এর সভাপতিত্বে এক উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ. ন. ম বদরুদ্দোজা। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা জাহিরুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি সদস্য জয়নাল, তথ্যসেবা সহকারী খালেদা আক্তার, বৃষ্টি সেন, সমাজসেবক শাহ আলম প্রমুখ।

উঠান বৈঠকে আসা ত্রিপুরা পাড়া গ্রামের গৃহিণী
অন্তর মনি ত্রিপুরা(৩৫), রন্ধা মনি ত্রিপুরা (৪৪), বিশ্ব মিত্র ত্রিপুরা (৩৮) ও লুপি মনি ত্রিপুরা (৪০) বলেন, আমরা সবসময় সংসারের কাজে ব্যস্ত সময় পার করি। আমরা আগে বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকসহ বিভিন্ন বিষয়ের খারাপ দিক সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না। কিন্তু তথ্য আপার উঠান বৈঠকে এসে এসব খারাপ বিষয়ের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে পেরেছি। আমরা সচেতন হয়েছি এবং যারা উঠান বৈঠকে আসতে পারেনি আমরা তাদেরও এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করছি। গ্রামের গৃহিণীরা তথ্য আপার উঠান বৈঠক দ্বারা অনেক উপকৃত হচ্ছি। বেশি বেশি করে এ ধরনের উঠান বৈঠকের আয়োজন করা উচিত। গ্রামের মহিলারা সচেতন হলেই সমাজ থেকে এ ধরনের ক্ষতিকর ভাইরাস নামক সমস্যাগুলো আস্তে আস্তে দূর করা সম্ভব।

উপজেলা তথ্যসেবা কর্মকর্তা শাপলা খাতুন বলেন, গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার মহিলাদের মাঝে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তথ্যকেন্দ্রে এসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহণ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, উপজেলার সরকারি সেবাসমূহের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ, ভিডিও কনফারেন্স, ই-লার্নিং, ই-কমার্স, বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, ব্যবসা, জেন্ডার ও কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে উপজেলা তথ্যসেবা কেন্দ্র। প্রতিদিনই উপজেলার কোনো না কোনো গ্রামে গিয়ে ঐ এলাকার মহিলাদের মাঝে ভিডিও প্রদর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে উপজেলা তথ্যসেবা কেন্দ্র। এছাড়াও অনুপ্রেরণা ও উত্সাহ প্রদানের জন্য সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতিমূলক কাজে প্রশাসনকে সহযোগিতা করাসহ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মহিলাদের পুরস্কৃত করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ. ন. ম বদরুদ্দোজা বলেন, সরকার কর্তৃক গৃহীত রূপকল্প- ২০২১, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০) এবং এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রায় নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।

তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে তথ্য সেবা প্রদানের পাশাপাশি গ্রামের সুবিধা বঞ্চিত মহিলাদের জন্য উঠান বৈঠক আয়োজন করে গ্রামীণ তৃণমূল মহিলাদের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হচ্ছে। গ্রামীণ মহিলাদের জীবন ও জীবিকা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় যেমন: স্বাস্থ্যগত সমস্যা, বাল্যবিবাহ, ফতোয়া, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য, আইনগত সমস্যা এবং বিভিন্ন ডিজিটাল সেবাসমূহ যেমন: ই-কমার্স, স্কাইপি, ই-মেইল, ভিডিও কনফারেন্স ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে। তিনি ক্ষুদ্র ঋণ, ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার ও সামাজিক উন্নয়নের উপর গুরুত্বআরোপ করেন।

তিনি আরোও বলেন, নারীদের ক্ষমতায়ন ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই বর্তমান সরকার বিশেষ করে নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। তথ্য আপা প্রকল্প নারীদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়নকে আরো ত্বরান্বিত করবে। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ডিজিটাল সেবা, সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতিমূলক কর্মকাণ্ডসহ অনেক বিষয়ে তারা সচেতন নয়। তাই ডিজিটাল সেবা নিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে। আর এ সেবাগুলো মহিলাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি উপজেলায় সরকার এ তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছে।