আজ ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মোঃ এরশাদ আলম,লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)
লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ি গ্রামে ঐতিহ্যবাহী মাওলানা মুফাজ্জালুর রহমানের ১২৪ তম ঘোড়দৌড় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৯ ফেব্রুয়ারি (রোববার) বিকালে ঘোড়দৌড় সভা প্রধান অতিথি থেকে উদ্ধোধন করেন লোহাগাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক ( তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম।
সভা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আরিফ মাঈনুদ্দিনের সভাপতিত্বে সাংবাদিক মুহাম্মদ রায়হান সিকদারের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজসেবক আলহাজ্ব মাহফুজুর রহমান, লোহাগাড়া থানার সেকেন্ড অফিসার মুহাম্মদ আবদুল হক, ডিবির এসঅাই শাহিদুল ইসলাম, মেলা পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি মুহাম্মদ আইয়ুব প্রমুখ ।
মাওলানা মুফাজ্জালুর রহমানের ঘোড়দৌড় সভার ইতিহাস সূত্র প্রকাশ:
প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষে রোববার সনাতন ধর্মের অনুসারীরা সূর্য পূজা করে। এ পূজাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে।
সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় সংস্কৃতি থেকে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সূর্য পূজার উৎসব থেকে বিমুখ করতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার সুনামধন্য আলেম হযরত মাওলানা মুফাজ্জালুর রহমান (রহঃ) ১৮৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ঘোড়দৌড় সভা।
লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ী গ্রামে বসে এই মেলা।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বৃহৎ এ মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়।দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার লোক সমাগম হয় এই মেলায়। বিশাল এলাকাজুড়ে বসে মেলার স্টল।
মেলায় চারুকারু,কাঠ-বাঁশ, প্রসাধনী, বাচ্চাদের খেলার সামগ্রী, বেতের আসবাবপত্র, তৈজষপত্র, মিষ্টি, মাছসহ নানা রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে শত শত স্টলে ক্রেতারা ভিড় করেন।
হাজার হাজার দর্শক এই প্রতিযোগিতা ও মেলা উপভোগ করে থাকেন। মূল মেলা একদিন হলেও মেলার আগে ও পরের দিনও চলে মেলার বেচা-কেনা।
মেলার মূল আকর্ষণ ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতা বিধায় এটি ঘৌড়দৌড় মেলা বা সভা হিসেবে এতদঅঞ্চলে ব্যাপক পরিচিত।
কে এই বড় মাওলানা হযরত সৈয়দ মুফাজ্জালুর রহমান?
বড় মাওলানা হযরত সৈয়দ মুফাজ্জালুর রহমান ১৮২০ সালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ সূখছড়ি গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মাওলানা হাকিমউদ্দীন (রহ)’র পরিবারে জন্মগ্রহন করেন।
তাঁর পিতার নাম সৈয়দ মতিউল্লাহ মিয়াজী (রহ)। সাতকানিয়া মির্জাখীল গ্রামের বিখ্যাত সৈয়দ পরিবারের সদস্য সৈয়দ মতিউল্লাহ মিয়াজী (রহ) নিজ বাড়িতে বড় মাওলানা প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতে চলে যান।
ভারতের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হুগলি মাদ্রাসায় ভর্তি হন। উক্ত মাদ্রাসা থেকে তিনি হাদিস, তাফসির ও ফিকহ শাস্ত্রে ভাল ফলাফল অর্জন করেন।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাঁর মেধা ও চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ঐ মাদ্রাসায় মাওলানা পদে নিয়োগ দেন। সেখানে তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং আধ্যাত্মিক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। হুগলি মাদ্রাসায় শিক্ষকতার দায়িত্ব পালনে জ্ঞান দক্ষতার কারণে তাঁকে উপাধি দেয়া হয় “বড় মাওলানা” হিসেবে।
১৮৯২ সালে তিনি উক্ত মাদ্রাসা থেকে অবসর গ্রহণ করে নিজ গ্রাম সূখছড়িতে চলে আসেন। স্থায়ীভাবে বসবাস করে নিজ এলাকায় স্থাপন করেন মসজিদ ও মাদ্রাসা। তিনি সূখছড়ি এলাকার মানুষের শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।
আধ্যাত্মিক চর্চা ও ত্বরিকতের মাধ্যমে তিনি সুদূর আরাকান থেকে ফেনী পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন।
আঠারো ও ঊনিশ শতকের লেখকের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। তিনি প্রথম বাংলা ভাষায় ইলমুল ক্বিরাত রচনা করেন। ইসলাম সম্পর্কিত বহু গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: এহছানুল মোমেনিন, ফজলুল মোত্তাকি, ফজলুল ক্বারী ও ফতোয়া কিতাব ইত্যাদি। বড় মাওলানা সবসময় সাদা ঘোড়ায় চড়ে চলাফেরা করতেন।