আজ ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিষ্টার সায়েদুল হক সুমনের করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞ বা রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রিট দায়েরকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন আদালতের রায়ের পর ফেসবুক লাইভে এসে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।
লাইভে এসে ভিডিও বার্তায় সাইদুল ইসলাম সুমন বলেন, যদিও দুএকদিন পর আইনটা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবয়ন হবে কিন্তু আজ থেকেই জনসচেতনার জন্য সবাইকে হুশিয়ার হতে বলেন তিনি। প্রেসিক্রিপশন ছাড়া কোনো ফার্মেসি যেন অ্যান্টিবায়োটিক না বিক্রি করতে পারে সেদিকে সবার সজাাগ দৃষ্টি রাখতে অনুরোধ করেন তিনি।
তিনি জরিপ প্রকাশ করে বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে ২০১৮ সালে শুধু বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯শ জন ছিলেন আইসিইউ-এর রোগি। তাদের মধ্যে থেকে ৪শ জনকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের এই ধারা যদি চলতে থাকে তাহলে একটা সময় অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাবেন বলেও মতামত দেন তিনি।
জনস্বার্থে দায়ের করা এ-সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল জারিসহ দুইদিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে এ আদেশ দেন।
সারাদেশে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়েটিক বিক্রি বন্ধ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
হাইকোর্ট বলেছেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালক (ডিজি) সার্কুলার জারি করবেন। দুইদিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ জন্য প্রতি জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দেবেন তিনি।
প্রসঙ্গত : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন ব্যারিষ্টার সুমন। রিটে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, জনপ্রশাসন সচিব ও দেশের সকল জেলা প্রশাসকদের বিবাদী করা হয়েছে।
ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফ’সহ দেশের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন
গত ২২ এপ্রিল দ্য টেলিগ্রাফ ‘সুপারবাগস লিঙ্কড টু এইট আউট অব টেন ডেথস ইন বাংলাদেশ আইসিইউ’স’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ৮০ শতাংশ মৃত্যুর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সুপারবাগ দায়ী।
মৃতদের মধ্যে ৮০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত ইনফেকশনকে দায়ী করা হয়েছে। মৃত রোগীর বেশিরভাগ আসে সরকারি আইসিইউ থেকে। তবে, সেখানে এসব রোগী যথাযথ নজরদারিতে ছিলেন না।
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এই অবস্থা বেশি দেখা যায়। কারণ এসব দেশে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পরামর্শ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয় না। আবার ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজ থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক নেয়া এবং দোকান থেকে অবৈধভাবে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে রোগীরা ব্যবহার করেন। আবার মানুষের ব্যবহৃত ওষুধ অধিক লাভের জন্য পশুর ওজন বাড়াতেও প্রয়োগ করা হয় বলে জানিয়েছে ওই প্রতিবেদন।
রিট আবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে বলা হয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি শরীর প্রতিরোধ গড়ে তুললে সে অবস্থাকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।এসব কারণে প্রতিবছর বিশ্বে সাত লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াতে পারে এক কোটিতে।
রিটে আরও বলা হয়, অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের কারণে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা যে নষ্ট হয় বা হুমকি তৈরি করে-সে বিষয়টি তুলে ধরতে জাতীয় ওষুধ নীতি ব্যর্থ হয়েছে। অ্যাটিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার মানুষের মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি করছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে এই ফাঁদ থেকে মানুষকে রক্ষা করা।
সে ধারাবাহিকতায় আজ থেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়া এনটিবাইটক ব্যবহার নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী দুএকদিনের মধ্যে ডিসি এবং সিভিলসার্জনের কাছে এ নিষেধাজ্ঞা পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য : বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়ে ব্যারিষ্টার সায়দুল হক সুমনের কার্যক্রম ইতিমধ্যে নজর কেড়েছে দেশবাসীর। তিনি নিজ উদ্যোগে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। এর আগে মহাসড়ক থেকে বৈদ্যুতিক খুটি অপসারণে তার করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে সারাদেশের পল্লিবিদ্যুতসহ বিদ্যুৎ সরবরাহের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বৈদ্যুতিক খুটি সরানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো।